
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের মধ্যকার সম্পর্ক বৃহস্পতিবার নাটকীয় ও প্রকাশ্যভাবে ভেঙে পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাস্কের লাভজনক সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন, আর মাস্ক পাল্টা অভিযোগ করেন যে, ট্রাম্প তাঁর (মাস্কের) সহায়তা ছাড়া কখনোই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় রিপাবলিকানদের নতুন কর ও বাজেট বিল নিয়ে মাস্কের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে।
বিকেলে মাস্ক তাঁর ভাষায় “সবচেয়ে বড় বোমা” ফাটান, দাবি করে বলেন, ট্রাম্পের নাম জেফরি এপস্টেইনের মামলার নথিতে রয়েছে। এপস্টেইন ছিলেন এক কুখ্যাত আর্থিক ব্যক্তি, যিনি ২০১৯ সালে যৌন পাচার মামলায় গ্রেফতারের পর জেলে আত্মহত্যা করেন।
দীর্ঘ দিনের প্রণয়ের পর বিচ্ছেদের কর্কট সুরে -প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের দ্বন্দ এবার প্রকাশ্যে
“@realDonaldTrump এপস্টেইন ফাইলগুলোতে আছেন। এটাই আসল কারণ যে কেন এই ফাইলগুলো এখনো প্রকাশিত হয়নি। শুভ দিন, DJT!”
উল্লেখ্য, এপস্টেইন ২০১৯ সালে যৌন পাচারের অভিযোগে গ্রেফতারের পর জেলে আত্মহত্যা করেন এবং তাঁর সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পর্কের গুজব ছড়িয়ে আছে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া: “সে আগে থেকে বিরক্তিকর হয়ে উঠছিল”
মাস্কের আক্রমণের পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে লেখেন,
“এলন ক্রমশ বিরক্তিকর হয়ে উঠছিল। আমি তাকে যেতে বলেছিলাম। আমি তার ইভি ম্যান্ডেট বাতিল করেছিলাম, আর তখন থেকেই সে পাগল হয়ে যায়!”
তিনি আরও বলেন, মাস্কের সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিল করা বাজেট সাশ্রয়ের সবচেয়ে সহজ উপায়।
সরকারি চুক্তি নিয়ে হুমকি, শেয়ারবাজারে ধস
ট্রাম্পের মন্তব্যের পরে টেসলার শেয়ার রাতারাতি ১৮% পড়ে যায়। মাস্ক জানান, স্পেসএক্স তার ড্রাগন স্পেসক্র্যাফট বন্ধ করতে পারে, যদিও পরে জানান সেই সিদ্ধান্তে ফিরে এসেছেন।
মাস্ক রিপাবলিকানদের নতুন “বিগ বিউটিফুল বিল”-কে “জঘন্য” ও “অশ্লীল” বলে আখ্যা দেন। বিলটির আওতায় ট্রাম্প শত শত বিলিয়ন ডলারের ব্যয় ছাঁটাই করছেন, কর ছাড় দিচ্ছেন। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস জানিয়েছে, এতে ১০ বছরে $২.৪ ট্রিলিয়ন বাজেট ঘাটতি হবে।
মাস্ক বলেন, “এই বিল কখনোই আমার সামনে আনা হয়নি,” এবং অভিযোগ করেন এটি গভীর রাতে পাস করানো হয়েছে।
“আমার ছাড়া ট্রাম্প জিততেন না” — মাস্কের কটাক্ষ
মাস্ক দাবি করেন, তিনি না থাকলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না এবং রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রণ পেত না।
“আমি $২৭৭ মিলিয়ন খরচ করেছি, কী অকৃতজ্ঞতা!”
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের অবস্থান
ভ্যান্স এক্সে লেখেন, “আমি প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়াতে গর্বিত।” তিনি মাস্কের নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর মন্তব্য ট্রাম্পের অবস্থানকেই সমর্থন করে।
এক সপ্তাহ আগেই হোয়াইট হাউসের চাবি পেয়েছিলেন মাস্ক
মাত্র সাত দিন আগেই ট্রাম্প মাস্ককে হোয়াইট হাউসের একটি বিভাগের দায়িত্ব ও প্রতীকী “চাবি” দিয়েছিলেন। মাস্ক শুক্রবার সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
ওভাল অফিসে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে সাংবাদিকদের মূল আগ্রহ ছিল ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব নিয়ে। বৈঠকে ট্রেড, ট্যারিফ, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়েও আলোচনা হয়।
চ্যান্সেলর মের্জ ট্রাম্পকে তাঁর দাদার জার্মান জন্মসনদের একটি কপি উপহার দেন, যা ছিল জার্মান ও ইংরেজি ভাষায়।