
পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার রেশ কাটার আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরে দেশের অন্যতম উচ্চাভিলাষী রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এই রেললাইনটি প্রথমবারের মতো কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ট্রেনযোগে যুক্ত করল।
ভারতের সরকারি রেল সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে জানায়, ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথটি জম্মুর উদমপুর থেকে শুরু হয়ে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর হয়ে বারামুল্লায় গিয়ে শেষ হয়েছে। হিমালয়ের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা লাইন অব কন্ট্রোলের কাছাকাছি অবস্থিত বারামুল্লা শহরে পৌঁছায় রেললাইনটি।
প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আওতায় ৩৬টি সুড়ঙ্গ ও ৯৪৩টি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর চলাচলও সহজতর করবে।
রেলপথটির সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশ হলো চেনাব নদীর ওপর নির্মিত স্টিল ও কংক্রিটের বিশাল সেতু, যার দৈর্ঘ্য ১,৩১৫ মিটার এবং উচ্চতা নদীর উপর থেকে ৩৫৯ মিটার—যা আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু। এই সেতুটি ২৬০ কিমি/ঘণ্টা গতির ঝড় সহ্য করতে সক্ষম এবং নির্মাণের আয়ু ১২০ বছর।
শুক্রবার কড়া নিরাপত্তায় মোদি চেনাব সেতু পরিদর্শন করেন ও পতাকা উত্তোলন করে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেনে যাত্রা করেন। পরে তিনি আরেকটি উঁচু সেতু আনজি-এর উদ্বোধন করেন।
মোদি বলেন, এই রেলপথ “সারা বছরব্যাপী যোগাযোগ নিশ্চিত করবে”, “ধর্মীয় পর্যটনে সহায়তা করবে” এবং “নতুন জীবিকা সৃষ্টি করবে।”
এছাড়া তিনি “বন্দে ভারত” নামে দুটি আধুনিক ট্রেন উদ্বোধন করেন, যা শ্রীনগর ও কটরার মধ্যে ভ্রমণের সময় ছয়-সাত ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় নামিয়ে আনবে।
মোদির এই সফর এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন এপ্রিলের শেষ দিকে কাশ্মীরে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন, বেশিরভাগই হিন্দু পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। দুই দেশই সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মীরের পূর্ণ মালিকানা দাবি করে, যদিও অঞ্চলটির কিছু অংশ তারা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
কাশ্মীরের ভারত-শাসিত অঞ্চলে ১৯৮৯ সাল থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে, যার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে নয়াদিল্লি দাবি করে আসছে। তবে পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে।