মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-এ অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে হোয়াইট হাউজ মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে। তাঁর এই সফর দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ন্যাটোর সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ট্রাম্পের অংশগ্রহণ নিয়ে এতদিন অনিশ্চয়তা থাকলেও হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি নিশ্চিত করতে পারি, তিনি (ট্রাম্প) ন্যাটো সম্মেলনে যাচ্ছেন।”
এএফপি-র এক প্রশ্নের জবাবে লেভিট এ কথা জানান।
এই সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় হবে—ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যাপক বৃদ্ধি, যা দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান দাবি। তিনি ন্যাটোর অন্যান্য মিত্রদের দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছেন, তাদের "ন্যায্য অংশ" না দেওয়ার অভিযোগ তুলে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
সম্মেলনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধও একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিশ্চিত করেছেন যে তার দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে এক উত্তপ্ত বৈঠক হয়, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ পায়।
ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি ও নতুন শর্ত
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তার অবস্থান আরও কড়াকড়ি হয়েছে—তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব দেশ যথেষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যয় করছে না, যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষায় আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে না।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, ইউরোপে মার্কিন সেনা মোতায়েনের যৌক্তিকতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ, এবং তাদের নজর এখন চীনসহ অন্যান্য বৈশ্বিক হুমকির দিকে। এর ফলে কানাডা, ডেনমার্কসহ কয়েকটি মিত্রদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় দাবি ও আপোষ প্রস্তাব
ট্রাম্প এখন দাবি করছেন, প্রতিটি ন্যাটো দেশকে তাদের জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে। অথচ বর্তমানে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও এই মান পূরণ করে না।
এই পরিস্থিতিতে ন্যাটোর মহাসচিব এবং নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে একটি আপোষমূলক প্রস্তাব দিয়েছেন—যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩২ সালের মধ্যে জিডিপির ৩.৫% সরাসরি প্রতিরক্ষা খাতে এবং অতিরিক্ত ১.৫% নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ট্রাম্প তা নিজের কূটনৈতিক জয় হিসেবে দাবি করতে পারবেন, যদিও পুরো অতিরিক্ত ব্যয় নতুন নয়।
মে মাসে এই আপোষ পরিকল্পনা জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো প্রধান ন্যাটো মিত্রদের সমর্থন পেয়েছে, যা সম্মেলনে এর অনুমোদনের সম্ভাবনাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।