
যুক্তরাজ্যে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর অবরোধ জারির আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভের আয়োজন করে Palestine Solidarity Campaign (PSC)। বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয় এমন এক সময়ে যখন প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার পার্লামেন্টে সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা লাল পোশাক পরে “Red Line for Palestine” কর্মসূচির আওতায় পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে মানববন্ধন গঠন করেন।
স্টারমার পার্লামেন্টে তার বক্তব্যে গাজার পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ” এবং “অসহনীয়” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এটি একটি অন্ধকার সময়। আমরা ইসরায়েলের সামরিক অভিযান, অবৈধ বসতি স্থাপনকারী সহিংসতা এবং মানবিক সহায়তা অবরোধের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে এবং আরও পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।
তবে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই স্টারমার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, এবং সরকারের অন্যান্য সদস্যদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ও দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই যুদ্ধকে “সবচেয়ে নিষ্ঠুর ধাপ” বলে অভিহিত করেছেন।
আল জাজিরার রিপোর্টার ররি চাল্যান্ডস লন্ডন থেকে জানিয়েছেন, বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন থেকে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ পর্যন্ত মানববন্ধন তৈরি করেন এবং পুরো এলাকা ঘিরে একটি বৃত্ত সম্পন্ন করেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এই “রেড লাইন” প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা দেখাতে চেয়েছেন যে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত ছিল আগেই একটি মানবিক সীমারেখা নির্ধারণ করা।
তারা প্রশ্ন তোলেন: “৫৪,০০০ মানুষ মারা যাওয়ার আগেই রেড লাইন থাকা উচিত ছিল না?”
স্টারমার তার বক্তব্যে গাজার ওপর অবরোধ প্রত্যাহার এবং দ্রুত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানান।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে গাজার ওপর অবরোধ বজায় রেখেছে, যার ফলে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুতের জ্বালানির প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষ অনাহারে ভুগছে।
এদিকে, বিতর্কিত যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সংস্থা Gaza Humanitarian Foundation (GHF) একদিনের জন্য গাজায় তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়ে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্যের সন্ধানে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে ডজনখানেককে হত্যা ও শতাধিককে আহত করেছে। GHF ২৭ মে থেকে গাজায় সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছিল।
ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, “মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত করা হচ্ছে।” জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস ঘটনাটির স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪,৬০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২৫,৩৪১ জন আহত হয়েছেন।