
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে ন্যাটো সদস্য দেশগুলো সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) ৫% প্রতিরক্ষা খরচের লক্ষ্যে সম্মত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুনের শেষের দিকের হেগ সম্মেলনের আগেই এ বিষয়ে একটি সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি ঘোষণা আসবে।
বর্তমানে ন্যাটোর নির্ধারিত ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা GDP-র ২%, কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হার বাড়িয়ে ৫% করতে হবে। যদিও এখনো কোনো দেশ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও ৫% ব্যয় করছে না, তবে হেগসেথ বলেছেন, এই লক্ষ্য অর্জনের পথে অগ্রগতি হচ্ছে।
হেগসেথ বলেন, “আমরা আজ সকালে যা শুনেছি তাতে আমি বেশ উৎসাহিত। অনেক দেশ ইতোমধ্যেই ২% ছাড়িয়ে গেছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে ৫% লক্ষ্যে একপ্রকার সর্বসম্মতি গঠিত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এর আগেই সিদ্ধান্ত হোক—জুন ২৪-২৫ তারিখের মধ্যে হেগ শহরে ন্যাটো সম্মেলনের পূর্বেই।”
৩.৫% সামরিক খাতে, ১.৫% নিরাপত্তা খাতে ব্যয় প্রস্তাব
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ৫% লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৩.৫% সরাসরি সামরিক খাতে ও ১.৫% নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় করার একটি কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। হেগসেথ বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা চাইলে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক। এই জোট আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি ঐতিহাসিক ৫% ব্যয় প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে।”
স্পেনের দ্বিধা, বিভক্ত সময়সীমা প্রস্তাব
তবে সব দেশ এখনো পুরোপুরি একমত নয়। স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্গারিটা রোব্লেস বলেন, “আমরা মনে করি ২% যথেষ্ট। প্রতিটি দেশ যেন তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী লক্ষ্যে পৌঁছায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
সম্মেলনের আগপর্যন্ত এই বিষয়ে আলোচনা চলবে বলেই ধারণা করছেন কূটনীতিকরা।
মার্ক রুটে আশা প্রকাশ করেন, সম্মেলনে প্রতিটি দেশের জন্য নতুন কিছু “ঐতিহাসিক” সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে – যাতে সেনা, অস্ত্র এবং গোলাবারুদের পরিমাণসহ ইউরোপ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা দায়িত্বে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, জার্মানিকে নতুন লক্ষ্য পূরণে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ অতিরিক্ত সক্রিয় সেনা নিয়োগ দিতে হবে।
সময়সীমা নিয়ে মতভেদ
রুটে প্রস্তাব করছেন, ২০৩২ সালের মধ্যে ৫% লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করছে, এটি খুব দেরি হয়ে যাবে। এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হ্যানো পেভকুর বলেছেন, “আমাদের হাতে ১০ বছর নেই, এমনকি ৭ বছরও না। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।”
সুইডেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পল জনসন চান, ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা নির্ধারিত হোক।
‘প্রতিরক্ষা ব্যয়’ সংজ্ঞা নিয়েও বিতর্ক
বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক হচ্ছে—‘প্রতিরক্ষা খরচ’ বলতে কী বোঝাবে? এতে সাইবার নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো খরচকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রত্যাশা অনুযায়ী ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হলে ইউরোপে মার্কিন প্রতিরক্ষা উপস্থিতি বজায় রাখা সহজ হবে এবং ট্রাম্প এটি রাজনৈতিক ‘জয়’ হিসেবে দাবি করতে পারবেন।