
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বৃহস্পতিবার এক নাটকীয় ও প্রকাশ্য ভাঙনের মুখে পড়ে। ট্রাম্প বললেন, তিনি মাস্ককে নিয়ে “ভীষণ হতাশ”, আর মাস্ক পাল্টা দাবি করলেন, তাঁর বিপুল অর্থায়ন না থাকলে ট্রাম্প কখনো প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না।
এই সম্পর্কচ্যুতির কারণ রিপাবলিকানদের “বিগ, বিউটিফুল বিল” সংক্রান্ত বিতর্ক। বিলটি ট্রাম্পের ঘরোয়া এজেন্ডা বাস্তবায়নে ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড় এবং শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় কাটছাঁটের পরিকল্পনা করেছে। মাস্ক এই বিলকে “অপমানজনক” ও “জঘন্য জঞ্জাল” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস বুধবার জানিয়েছে, এই বিল আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়াবে — যেটি ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা অস্বীকার করছেন।
হোয়াইট হাউজে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প প্রথমবার মাস্কের সমালোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
ট্রাম্প বলেন, “ইলনের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল। এখন আর থাকবে কিনা, জানি না।”
তিনি আরও বলেন, বিল তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় ইলন মাস্ক ছিলেন এবং তেমন কোনো আপত্তি করেননি যতক্ষণ না ইলেকট্রিক গাড়ির ভর্তুকি তুলে দেওয়ার অংশটি আসে — যা টেসলার ব্যবসার ওপর সরাসরি আঘাত হানে। এই বিল বাইডেন যুগের জলবায়ু ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কর আইনের অধীনে থাকা পরিচ্ছন্ন শক্তির ট্যাক্স ক্রেডিট তুলে দিচ্ছে।
“আমি ইলনের ওপর খুব হতাশ। আমি তাঁকে অনেক সাহায্য করেছি,” — বলেন ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, মাস্ক “ভাল কাজ করেছেন” এবং “পরিশ্রম করেছেন”।
“সত্যি বলতে, আমি মনে করি সে (মাস্ক) এখানকার পরিবেশটাকে মিস করে। আমার প্রশাসন থেকে যারা যায়, অনেকেই ভালোবাসে, আবার কেউ কেউ খুব বিরূপ হয়ে ওঠে। এটা একটা ধরনের ‘ট্রাম্প ডিরেইঞ্জমেন্ট সিনড্রোম’ বোধহয়,” — মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট।
মাস্কের পাল্টা জবাব
মাস্ক এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দ্রুত জবাবে লেখেন:
“যা খুশি করো। বিল থেকে ইভি/সোলার ভর্তুকি বাদ দাও, কিন্তু তেল-গ্যাস ভর্তুকি তো একটুও ছোঁয়া হয়নি (একদম অন্যায়!!), অথচ এই বিল জুড়ে শুধু ‘জঘন্য পর্ক’ (অপ্রয়োজনীয় ব্যয়)!”
আরেক পোস্টে মাস্ক বলেন, “এই বিল একবারও আমাকে দেখানো হয়নি। রাতের আঁধারে এত দ্রুত পাস করা হয়েছে যে কংগ্রেসের কেউই পড়ে দেখার সময় পাননি!”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমাকে ছাড়া ট্রাম্প কখনোই জিততে পারতেন না, ডেমোক্র্যাটরা হাউজে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকত এবং সেনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা থাকত ৫১-৪৯। কী অকৃতজ্ঞতা!”
উল্লেখ্য, বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক গত নির্বাচনে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের পক্ষে প্রায় ২৭৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন।
রিপাবলিকান ঐক্যে ফাটল?
মাস্কের বিরোধিতা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের মূল বাণিজ্য বিলকে ঘিরে রিপাবলিকানদের মধ্যে ঐক্য টিকিয়ে রাখা যাবে কি না — সেই প্রশ্ন তুলেছে। যদিও কংগ্রেসে রিপাবলিকান নেতারা আপাতত বিলটিকে এগিয়ে নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার মাস্ক ও হাউজ স্পিকার মাইক জনসনের মধ্যে বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।