
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার এক দীর্ঘ ফোনালাপে অংশ নেন। হোয়াইট হাউজের অনুরোধে আয়োজিত এই ফোনালাপে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে অচিরেই সরাসরি বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইস্টার্ন টাইম সকাল ৯টা পর্যন্ত ফোনালাপটি চলে। ট্রাম্প পরে ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে জানান, এই আলোচনা প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী হয় এবং মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বাণিজ্য। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে নতুন এক বৈঠকের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যদিও স্থান এখনও নির্ধারিত হয়নি।
এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে প্রথম ফোনালাপ, যদিও জানুয়ারিতে অভিষেকের আগে একবার তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল।
কঠিন চুক্তি, কিন্তু ব্যক্তিগত পছন্দ
বুধবার ভোরে নিজের প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, “আমি চীনের প্রেসিডেন্ট শিকে পছন্দ করি, সবসময় করেছি এবং করব, কিন্তু তিনি খুবই কঠিন, এবং তাঁর সঙ্গে চুক্তি করা ভীষণ কষ্টকর!!!”
বাণিজ্যযুদ্ধ, ট্যারিফ এবং জেনেভা চুক্তি
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। একের পর এক ট্যারিফ আরোপ করে উভয় দেশ শত শত বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে।
বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কহার প্রায় ৩০ শতাংশ, যা জেনেভায় এক প্রাথমিক সমঝোতার আগে ছিল ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। ওই চুক্তির আওতায় চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে।
তবে গত সপ্তাহে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, চীন চুক্তি ভেঙেছে, যদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সোমবার চীনও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলে।
চীনের একজন মুখপাত্র জানান, প্রেসিডেন্ট শি ফোনালাপে জোর দিয়ে বলেন, বেইজিং সততার সঙ্গে জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র যেন নেতিবাচক পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করে তা চায়।
বাণিজ্য ঘাটতির উল্লেখযোগ্য হ্রাস
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি নেমে এসেছে ১৯.৭ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন। ওয়েলস ফার্গোর বিশ্লেষণে বলা হয়, প্রথম প্রান্তিকে অতিরিক্ত আমদানির ফলে তৈরি হওয়া মজুদের চাহিদা কমে যাওয়ায় এই হ্রাস দেখা যাচ্ছে।
TikTok ও ফেন্টানিল ইস্যু
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন কাজ করছে TikTok-এর মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে। আগামী ১৯ জুন সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ByteDance-কে অ্যাপটি বিক্রি করতে হবে, না হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হবে। এখন পর্যন্ত এই ইস্যুতে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
এছাড়া মেক্সিকো সীমান্তে ফেন্টানিল জব্দের হার কমলেও, চীন থেকে এর উৎস বন্ধ করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি বলে প্রশাসনের ভেতরেই সমালোচনা রয়েছে।
সমালোচনা ও অনিশ্চয়তা
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বারবার প্রতিশ্রুতি এবং রাজনৈতিক সমঝোতা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। গত মাসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘোষিত চুক্তিটিও রাজনৈতিক ঘোষণা হিসেবেই রয়ে গেছে, যা ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার পরিবর্তে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ ও নিয়োগ পরিকল্পনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।