
প্রতিদিনের জীবনে বোমা, ধ্বংসস্তূপ আর সহিংসতার ছায়া। গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জীবনে ঈদের সকাল আসে না আনন্দের ঢেউ নিয়ে, বরং আসে এক কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে — জীবিত আছেন কিনা, তা নিশ্চিত না হয়েও ঈদের নামাজে সেজদাহ দিতে হাজির হন তাঁরা।
মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদুল আযহা যেমন আনন্দ ও ত্যাগের উৎসব, তেমনি ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি হয়ে ওঠে প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ ও প্রার্থনার প্রতীক। ‘কোরবানির ঈদ’ নামে পরিচিত এই উৎসবে মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এ কোরবানির পেছনে রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর আত্মত্যাগের গল্প, যা বিশ্বাস, আনুগত্য ও আত্মনিবেদনের এক অমর নিদর্শন।
এই পবিত্র কাহিনির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখেই গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদগুলোর ধূলিধুসর চত্বরে কিংবা পশ্চিম তীরের সামরিক নজরদারির ভেতরেও মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। জীবন-মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে তারা ঈদের জামাতে অংশ নেন — কারো চোখে জলের কণা, কারো হাতে শহিদ সন্তানের ছবি। এই প্রার্থনা যেন শুধু ঈদ উদযাপন নয়, বরং এক আর্তনাদ — “হে আল্লাহ, শান্তি দিন আমাদের ভূমিতে”।
ফিলিস্তিনে ঈদের কোরবানি শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি এক প্রতিবাদ — অবরোধের মাঝেও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের নাম। সীমিত সম্পদ, মানবিক সংকট, বিদ্যুৎ-পানি সংকট উপেক্ষা করে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই তাঁরা ভাগাভাগি করেন। ঈদের মাংস পৌঁছে যায় প্রতিবেশীর ঘরে, অনাথ শিশুর প্লেটেও।
এই ঈদ, যেখানে পেছনে পড়ে থাকে ধ্বংসস্তূপে মায়ের আহাজারি, সামনে থাকে খোলা আকাশের নিচে সেজদাহরত কিশোরের অদম্য বিশ্বাস — এমন ঈদ ফিলিস্তিনিদেরই মানায়, কারণ তারা জানে, ঈদ মানে শুধু উৎসব নয়, ঈদ মানে প্রতিটি নিঃশ্বাসে লড়াই করে টিকে থাকা এক জীবন্ত কোরবানি।
ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীরে ঈদুল আযহা শুধু একটি ধর্মীয় উদযাপন নয়; এটি তাদের অস্তিত্বের আহ্বান, আত্মত্যাগের গৌরব এবং স্বাধীনতার প্রার্থনা। অনিশ্চয়তার ছায়া গাঢ় হলেও, বিশ্বাস ও ভক্তির আলোতেই ফিলিস্তিনি মুসলমানরা উদযাপন করছেন ঈদ — বুকভরা কষ্ট আর ঈমানভরা দোয়ায়।