নেদারল্যান্ডসে চার দলীয় জোট সরকারের ভাঙনের পর প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ পদত্যাগ করেছেন এবং দেশটিতে আগামী ২৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুডিথ ইউইটারমার্ক এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এই নির্বাচন ঘোষণাটি এসেছে জোট সরকার গঠনের মাত্র ১১ মাস পর। ২০২৩ সালের নভেম্বরে গঠিত এই জোটটি ছিল ফার-রাইট ফ্রিডম পার্টি (PVV), VVD, কৃষকদল BBB এবং মধ্যপন্থী NSC নিয়ে গঠিত একটি জোট। তবে অভিবাসন নীতি নিয়ে তীব্র মতবিরোধে এই সরকারের পতন ঘটে।
PVV নেতা গার্ট ওয়াইল্ডারস সম্প্রতি ১০ দফা কঠোর অভিবাসন পরিকল্পনা উত্থাপন করেন, যেখানে সীমান্তে সেনা মোতায়েন এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর মতো কঠিন পদক্ষেপের প্রস্তাব ছিল। তিনি সরাসরি ঘোষণা করেন, “যদি অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা না আনা হয়, তাহলে PVV মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাবে।”
এরপর এক জরুরি বৈঠকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার দলের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেন, যার ফলে জোট ভেঙে পড়ে এবং ডিক স্কোফ সরকার পতনের ঘোষণা দেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তীব্র প্রতিক্রিয়া
ডানপন্থী VVD নেত্রী ডিলান ইয়েসিলগোজ ওয়াইল্ডারসের সিদ্ধান্তকে “চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে মন্তব্য করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
“আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী আমাদের জানান যে, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এমন সময় সরকারের পতন ভয়ংকর ভুল।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ভবিষ্যতের রূপরেখা
নির্বাচনের আগে ডিক স্কোফ একটি কেয়ারটেকার সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ডাচ নির্বাচন কাউন্সিল আগেই ২৯ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল, কারণ ৪ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদ ছুটিতে থাকবে এবং এরপর চলবে প্রচারণা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও নেদারল্যান্ডস নাটো সম্মেলনের আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী স্কোফ বলেন:
“আমি চাই, ইউক্রেনকে সহায়তা এবং আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোয় আগামী মাসগুলোতে সরকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখুক।”
তিনি আরও সতর্ক করেন
“ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সম্ভাব্য বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ আমাদের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সরকারকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সক্রিয় থাকতে হবে।”