বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এই ঘোষণায় প্রকাশ্যে হতাশা ও ক্ষোভ জানালেও, অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক মহল এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে—কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত হওয়াকে কেন্দ্র করে।
তবে, নির্বাচনের নির্ধারিত সময়সীমাকে ঘিরে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সেই আলোচনাই এখন কেন্দ্রবিন্দুতে।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও সময়ের সংকট
স্বল্প সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি—এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ অতীতে সময়সাপেক্ষ ও জটিল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ঘাটতি থাকায় কাজগুলো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ ও বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি।” কিন্তু বিএনপি এই বক্তব্যকে “রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা লঙ্ঘন” হিসেবে উল্লেখ করে একে একচেটিয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে জানানো হয়, অধ্যাপক ইউনূস করিডর, বন্দর বা আঞ্চলিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে মন্তব্য করে তার সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করেছেন। দলটির ভাষ্যমতে, এই ইস্যুগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং সরকার নিরপেক্ষ রাখার শর্ত ভঙ্গ করেছে।
এপ্রিলের সময়সূচি নিয়ে যুক্তি ও বিতর্ক
বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে কেন নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে আয়োজন করা সম্ভব নয়—সেই ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ছিল না। তাদের মতে, এপ্রিল মাসের গরম, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত এবং রমজান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও একমত যে, এপ্রিল মাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময়সীমা, ধর্মীয় পবিত্রতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা—সবমিলিয়ে এই সময় নির্বাচন আয়োজন বাস্তবসম্মত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, “সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত হলে বিতর্ক থাকত না। প্রধান উপদেষ্টার ভাষায় রাজনৈতিক পক্ষপাতের আভাস পাওয়া গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে সেটি ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিতে পারে।”
একটি সম্ভাব্য অচলাবস্থা?
সবমিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে দেশ আবারো একটি অনিশ্চয়তা, বিতর্ক ও অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে। রমজান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা—সবকিছু বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জোরালো হচ্ছে।