তাইজুলের ঘূর্ণিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বাংলাদেশের, লিডে দিন শেষ প্রোটিয়াদের
খেলাধুলা ডেস্ক:
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দেড় সেশনও ক্রিজে টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। টাইগারদের মাত্র ১০৬ রানে গুঁড়িয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। তবে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বল হাতে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরেছে লাল সবুজরা। যদিও লিড নিয়েই দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে মিরপুরে সোমবার (২১ অক্টোবর) মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনের খেলা শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান সংগ্রহ করেছে প্রোটিয়ারা। তাদের লিড ৩৪ রানের। ৩২ বলে ১৮ রান করে কাইল ভেরেইন্নে ও ৩১ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত আছেন উইয়ান মুল্ডার।
বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেয়ার পর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ৯ রানেই এইডেন মারক্রামের স্টাম্প ভেঙে দেন হাসান মাহমুদ। ৭ বলে ৬ রান করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
মারক্রামের উইকেট হারানোর পর টাইগার স্পিনারদের ঘূর্ণন ঝড়ের মুখে প্রতিরোধ গড়েছিলেন ত্রিস্টান স্টাবস ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। দুজনে গড়েন ৪১ রানের জুটি। কিন্তু তাদেরকে বেশিক্ষণ স্বস্তিতে থাকতে দেননি তাইজুল।
একের পর এক আঘাত হেনে প্রোটিয়া শিবিরে ভীতি ছড়াতে থাকেন এ বাঁহাতি স্পিনার। প্রথমে সাদমান ইসলামের ক্যাচ বানিয়ে তুলে নেন স্টাবসের উইকেট। ২৭ বলে ২৩ রান করেন ওয়ানডাউনে নামা ব্যাটার। ১১ রানে ফিরে যান বেডিংহ্যাম, তিনি ক্যাচ দেন লিটন কুমার দাসকে। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে একই ওভারে আবার জোড়া আঘাত হানেন তাইজুল। তার ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে ওপেনার টনি ডি জর্জি শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে দেন হাসান মাহমুদের হাতে। ৭২ বল মোকাবিলায় ৩০ রান করেন এ ওপেনার।
তিন বল পর টাইগার স্পিনারকে পড়তে ভুল করে বোল্ড হন ম্যাথিউ ব্রিজকে। তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ব্রিজকে শিকারের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে দুইশ উইকেটের ক্লাবে প্রবেশ করেন তাইজুল।
এদিন তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ ফাইফারও। ক্রিজ আঁকড়ে রাখা রায়ান রিকেলটনকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাজঘরে। ২৭ রানে থামে তার ইনিংস। শেষদিকে অবশ্য দলকে আর কোনো বিপদে পড়তে দেননি কাইল ভেরেইন্নে ও উইয়ান মুল্ডার।
এর আগে ১০৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকেন টাইগাররা ব্যাটাররা। স্বাগতিক শিবিরে প্রথম আঘাতটি আনেন প্রোটিয়া পেসার মুল্ডার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন সাদমান ইসলাম। প্রোটিয়া পেসার মুল্ডারের বলে দ্বিতীয় স্লিপে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি সাদমান। এক ওভার বিরতি দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুমিনুল হকও। ৬ বলে মাত্র ৪ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই বাঁহাতি। এবারও সেই মুল্ডারের আঘাত।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ৭ রান। মুল্ডারের বলে শর্ট মিড অফে কেশব মহারাজের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক। উইকেটে এসে বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু কাগিসো রাবাদার বল যেন বুঝে উঠতে পারলেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। শেষমেশ উইকেট দিয়ে আসলেন তিনি। ২০ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক।
৪০ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। চরম ব্যাটিং বিপর্যযে পড়া বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দিতে পারলেন না লিটন দাস। স্কোরবোর্ডে আর ৫ রান যোগ হতেই আউট হন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। কাগিসো রাবাদার বলে স্লিপে ত্রিস্টান স্টাবসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে মাত্র ১ রান।
লাঞ্চ বিরতি থেকে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি টাইগার ব্যাটাররা। দলীয় ৭৬ রানে আউট হন মাহমুদুল হাসান জয়। ড্যান পিয়েটের বলে সরাসরি বোল্ড হন জয়। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৯৭ বলে ৩০ রান। টেস্টে নিজের অভিষেকটা রাঙাতে পারেননি জাকের আলী। ১৫ বল খেলে ২ রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম মিলে যোগ করেন ৪৬ বলে ২৬ রান। তাদের দুজনের ব্যাটেই একশ পার করে বাংলাদেশ। দলীয় ১০২ রানে নবম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩১ বলে ১৬ রান করে তাইজুল আউট হলে ইনিংস গুঁড়িয়ে যায় ১০৬ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাগিসো রাবাদা, মুল্ডার ও কেশভ মহারাজ নেন ৩টি করে উইকেট। একটি উইকেট নিয়েছেন ড্যানি পিয়েট।