ডক্টর ইউনুসের সরকার আর আর্মির মধ্যে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে ক্রিটিকাল সংকট।
ডেস্ক রিপোর্ট
হাউজ এরেস্ট চুপ্পুকে কেন্দ্র করে, ডক্টর ইউনুসের সরকার আর আর্মির মধ্যে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে সেইটা প্রতিষ্ঠার পর ডক্টর ইউনুসের সরকারের সবচেয়ে ক্রিটিকাল সংকট।
অনেকে মনে করেন, সংকটটা বাম বিপ্লবী পিনাকি ভট্টাচার্য আর ফরহাদ মজহার তৈরি করেছে। কিন্তু আমি উনাদের দোষ দেই না। উনাদের ন্যারেটিভ তৈরির হ্যাডাম আছে, তারা হ্যাডাম দেখিয়েছেন।
এখন আরমিও বলবে, শুধুমাত্র ইনফ্লুয়েন্সারদের হ্যাডামের কারণে যদি হাউজ এরেস্ট চুপ্পুরে যাইতে হয়, তার পরে কিসের গ্যারান্টি আছে যে ইনারা জেনারেল ওয়াকারকেও সরাবে না কারন উনারা চুপ্পুর সাথে ওয়াকারকেও টার্গেট করেছে - হ্যাডাম আমাদেরও আছে, আমরাও হ্যাডাম দেখাবো।
বাম বিপ্লবীরা আপনাদের যাই বলুক, বাংলাদেশ সরকারের পেছনে বাংলাদেশ আর্মি ডে ওয়ান থেকে শক্ত ব্যাকিং দিয়েছে।
ভুল সবাই করেছে কিন্তু, ৫ই আগস্ট থেকে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঠাণ্ডা মাথায় ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের রেজাল্ট যেন সঠিক স্টেকহোল্ডাররা পায় সেইটার জন্যে যে অবদান রেখেছেন তার জন্যে উনাকে এই জাতির বছরের পর বছর মনে রাখতে হবে।
উনি বাদে যে কোন চপলমতি জেনারেল সেখানে অনেক কিছু ঘটাইতে পারতো কিন্তু উনি কোন উচ্চাভিলাষ দেখান নাই। কিন্তু সেই ভুমিকার জন্যে কোন থ্যাংকস ও পান নাই, ক্রমাগত অভিযুক্ত হয়েছেন যে গুলোর দায় উনার না।
আমি ৫০ দিন দেশে ছিলাম, সরকার, বিএনপি, ছাত্ররা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে নিয়মিত আলাপ করেছি, কারো মধ্যে হাউজ এরেস্ট চুপ্পুকে নিয়ে কোন কন্সার্ন শুনি নাই, সরকারের শীর্ষ এডভাইজারদের কাছ থেকে জেনারেল ওয়াকারের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনেছি যখন বাম বিপ্লবীরা তাকে নিয়ে কাউন্টার বিপ্লবের ভয় দেখায়, ইন্টারনেট ফাটায় ফেলতেছে।
বাংলাদেশ আর্মির সুযোগ ছিল এই সরকারকে বিভিন্ন ভাবে ডিস্ট্যাবিলাইজ করার। কিন্তু, গোপালগঞ্জে এপিসি অভিজান, পুলিশের এবসেন্সে সিকুরিটি মেন্টেন করা সহ অনেক কাজ আর্মি নীরবে করে গ্যাছে কোন ধরনের আওয়াজ না দিয়ে। সরকার যা বলেছে আর্মি নীরবে সেই ইন্সট্রাকশান শুনেছে। কোথাও ইন্টারফেয়ার করে নাই।
জেনারেল ওয়াকার স্পষ্ট ভাবে সিগন্যাল দিয়েছে যে উনাকে ট্রাস্ট করা যায় । কিন্তু অন গ্রাউন্ডের রিয়ালিটি ব্যতিরেকে ইন্টারনেট প্রপাগান্ডা হইছে জেনারেল ওয়াকার একটা প্যারালাল এডমিন তৈরি করেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি - এই প্রপাগান্ডা গুলো আমি সময় পেলে ডিল করবো।
কিন্তু জেনারেল ওয়াকার ও চুপ্পুকে কেন্দ্র করে প্রপাগান্ডা গুলোতে, একটা জিনিষ স্পষ্ট হয়েছে যে, চুপ্পুকে যদি নামানো হয় তবে, নেক্সট টার্গেট উনি। কারন অন লাইনের বাম বিপ্লবিরা চুপ্পুর সাথে জেনারেল ওয়াকারকে এক লাইনে বেধেছেন যেখানে জেনারেল ওয়াকারের চুপ্পুরে নিয়ে কোন কন্সারন নাই।
হাউজ এরেস্ট চুপ্পুকে সরকার রেখে দিয়েছে কন্সটিটিউশানাল কন্সিস্টেনেসির জন্যে। ১/১১ এর সময়ে ইয়াজুদ্দিনকেও এই ভাবে রেখে দেওয়া হয়েছিল- কোন প্রব্লেম হয় নাই।
ফলে চুপ্পুকে রাখা নিয়ে আর্মির যেখানে কোন রিয়েল স্টেক নাই, সেখানে আর্মির স্টেক তৈরি হয়েছে যে, ইউটিউবারদের প্রপাগান্ডার কন্সিকোয়েন্সে যদি চুপ্পু যায় তবে, সেই একই প্রভাবে জেনারেল ওয়াকারকেও যেতে হবে।
আপনি যদি মারক্সিস্ট না হন, তবে আপনি জানবেন, প্রতিটা ব্যক্তি তাঁদের রাজনীতি ও কর্মে তাঁদের নিজের ব্যক্তি স্বার্থ প্রাধান্য দেন।
জেনারেল ওয়াকার জানেন, ১/১১ এর পর মইন ইউ বা ১/১১ এর কুশীলবদের কি পরিনতি হয়েছে।
ফলে জেনারেল ওয়াকার চাইবেন, তার লিগাসি ও তার সিকিউরিটি এবং তার পারসোনাল স্টেক যেন রক্ষিত হয়।
ফলে জেনারেল ওয়াকারের এখন চুপ্পুকে নিয়ে কোন স্টেক না থাকলেও চুপ্পুর পদত্যাগে তার নিজের এক্সিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিস দেখবেন।
ফলে, আর্মি এখন ইউনুস এডমিনকে সিগন্যাল করবে। আমরা ফুল ব্যাকিং দিয়েছি, আমরা কোন অসহযোগিতা করি নাই। কিন্তু, আপনাদের ইনকম্পিটেন্সের কারণে যদি আমাদের এক্সিস্টেন্স প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে আমরা আমাদের প্রশ্নহীন ব্যাকিং প্রত্যাহার করবো - গেট ইউর শিট সরটেড আউট - হ্যাডাম আমাদের ও আছে।
ফলে আউট অফ নো রিজন এই সরকারের জন্যে চুপ্পু একটা এক্সিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করবে, যেখানে কিছু চপল মতি ইউটুবার এবং তাঁদের মাথাহীন ভক্ত বাদে , এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কেউ হাউজ এরেস্ট চুপ্পুকে বা আর্মিকে নিয়ে কোন ঝুঁকি দেখতেছিলো না।
এই সিচুয়েশান ইউনুস সরকারের জন্যে একটা বিশাল প্রব্লেম তৈরি করেছে এবং এইটার ফলে তাঁদের রিফরম এজেন্ডা ও স্থায়িত্ব উভয়েই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
কারন পলিটিকাল স্যাটেলমেন্টের মেইন স্টেকহোল্ডারের ব্যাকিং যদি চলে যায় তবে, যতই দিন যাবে সরকার বিভিন্ন ভাবে ভালনারেবল হইতে থাকে।
চুপ্পুকে স্যাক করলে , আর্মি ও জেনারেল ওয়াকার নিজেকে ভালনারেবল মনে করবে এবং তারা ধীরে ধীরে সরকারকে অসহযোগিতা শুরু করবে এবং দ্রুত নির্বাচনের জন্যে চাপ দিবে অন্য কে চুপ্পুকে রেখে দিলে বাম বিপ্লবীদের কথায় নাচা বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররাও চুপ্পুকে মানবে না, অন্য দিকে বাম বিপ্লবি ক্রমাগত এই প্রশ্নে সরকারকে এজিটেট করতে থাকবে। ফলে সরকার পরবে উভয় সংকটে এবং উভয় সিচুয়েশেনেই এই সরকারের ভিত্তি দুর্বল হইতে থাকবে।
দুর্বল ভিত্তির সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে ফাক আপ মারতে মারতে একটা পর্যায়ে বলবে, আমরা তাড়াতাড়ি ইলেকশান দিয়ে চলে যাই যেখানে কম্পিটেন্টলি দেশ চালাইলে এই সরকারের ৫ বছর দেশ চালানোর ম্যান্ডেট ছিল।
অনেকে বলবেন, এই দায় পিনাকি বা মজহারের। আমি বলবো এই দায় সরকারের রাজনৈতিক ম্যাচুরিটি না থাকার এবং দুর্বল রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার এদ্ভাইজারদের। এই সরকারের আসিফ নজরুল ও মাহফুজ বাদে আর কোন এডভাইজারের এই সব জটিল পলিটিক্স ডিল করার কোন অভিজ্ঞতা নাই।
একই সাথে সরকার গঠনের সময়ে তারা ভাবছিলেন, পাব্লিকের সাথে ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে, স্টেকহোল্ডারদের সাথে এঙ্গেজমেন্ট বাদে উনারা নিজেদের মত করে ক্ষমতার পাওয়ার ও প্রিভিলেজ ভোগ করবেন। তারা বাম, ডান, বিএনপি, কাউকেই ক্ষমতায় এঙ্গেজ করে নাই। ফলে ছাত্র দিনের তিন জন সরকারে ঢোকা নেতা বাদে কারো এই সরকারকে রক্ষা করার স্টেক তৈরি হয় নাই।
সো উনাদের সেই দুর্বল সরকার গঠনের পরিণতি ও তাঁদের অদক্ষতার পরিণতি এখন পুরো রাষ্ট্র ভোগ করতেছে। যেখানে রিফরম হওয়ার কথা ছিল আমাদের এজেন্ডা, যেখানে আওয়ামি লীগ ঠেকানো হওয়ার কথা ছিল আমাদের এজেন্ডা সেখানে পলিটিকাল স্যাটেল্মেন্টের মেইন স্টেক হোল্ডার রা যারা সবাই আওয়ামি লীগ ফিরে আসলে মৃত্যুদন্ডের ঝুঁকি আছে- তারা একেক পক্ষ একে পক্ষের পেছনে লেগে গ্যাছে।
মাত্র তিন মাসের মধ্যে এই ধরনের গ্যাঞ্জাম লাগাইতে অনেক বড় ইঙ্কম্পিটেন্ট হইতে হয়।