বাংলাদেশ ২৬ মার্চ: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতটি শুধুই বাঙলি জাতির ইতিহাসেই নয়,বরং মানবজাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ কালো অধ্যায়। রাতের নীরবতাকে ভেঙে হঠাৎ ট্যাঙ্কের গর্জন শোনা যায়। তখনকার পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশ, এর কোটি কোটি মানুষ সেই শুনেছিল বোমা আর গুলির শব্দ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ করে, যা পরবর্তী সময়ে
‘অপারেশন সার্চলাইট’ হিসেবে পরিচিতি পায়, এবং এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক ভয়াবহ গণহত্যার সূচনা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে প্রথমে ঢাকা শহরের নির্মাণাধীন জাতীয় সংসদ ভবনে, পরে আদমজী কলেজে এবং তারপর ফ্ল্যাগস্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিন পর, তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করা হয়
তখনকার আওয়ামী লীগের নেতারা সারাদিন ধরে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে একটি ফোন কলের অপেক্ষা করছিলেন, যাতে তাদের সংবিধানিক প্রস্তাবনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কল কখনও আসেনি। এর পরে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে করে সারা প্রদেশে ঘুরে, সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন এবং একটি সামরিক অভিযান শুরুর ব্যাপারে নির্দেশ দেন।
এদিন, যখন সন্ধ্যা নামতে শুরু করলো, শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণের গুজব রটে যায়। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ৩২ ধানমন্ডিতে অন্যান্য নেতারা উপস্থিত হন। শেখ মুজিব সবাইকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বললেও নিজে শহরে থাকবেন, কারণ তিনি জানতেন সেনাবাহিনী যদি তাকে আটক করতে চায়, তাহলে ঢাকাকে ধ্বংস করে দেবে।
এদিকে, পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাতে করাচি যাওয়ার জন্য একটি বিমানে চড়েন, আর তখনই "অপারেশন সার্চলাইট" বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে আক্রমণ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাকিস্তানি সেনাপ্রধান তিক্কা খান এবং মেজর জেনারেল খাদের হোসেন রাজা সৈন্যদের আক্রমণ শুরু করার নির্দেশ দেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একের পর এক শহরের বিভিন্ন এলাকা, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ মিনার, পুরানা ঢাকা, এবং ধানমন্ডির দিকে অগ্রসর হয়। ঢাকায় সেনাবাহিনীর প্রথম লক্ষ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা। একদিকে শহীদ মিনার ও কালিমন্দির ধ্বংস করা হয়, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের ধরার জন্য অভিযান চালানো হয়
পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ মানুষের উপর আক্রমণ চালায়। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়, বিশেষত শিক্ষার্থী, পুলিশ, রিকশাওয়ালা, এবং বাঙালি সেনা সদস্যরা আক্রান্ত হন। এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি সুপরিকল্পিত শত্রু নির্মূলকরণ অভিযান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবীদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। ছাত্রদের একে একে লাইনে দাঁড়িয়ে গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়, এবং পরে তাদের মরদেহ একটি দ্রুত খনন করা গণকবরে সমাহিত করা হয়।
এ অপারেশনটি পরবর্তী ৯ মাসের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ গণহত্যা এবং সংগ্রামের সূচনা হয়, যা অবশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং হত্যাযজ্ঞের ফলে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ২লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারায়। এবং এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্তি লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জম্ম হয় বিশ্বমান চিত্রে