ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) তাদের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে চীন, ইরান, রাশিয়া, ভারত, সৌদি আরবসহ মোট ১৬টি দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা খারাপ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং এসব দেশের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের সময়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। চীন- ২০২৪ সালে, চীনে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপগুলোর মধ্যে ছিল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (CCP) নেতা শি জিনপিং চীনের “ধর্মের সিনিকাইজেশন” নীতির হালনাগাদ এবং বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, যা স্বীকৃত ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর জন্য CCP, তার রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং নীতির প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং অবিচল থাকার দাবি করে। ফেব্রুয়ারিতে শিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ধর্মীয় বিষয়ক বিধিমালায় সংশোধনীগুলি সিনিকাইজেশন নীতিকে আরো শক্তিশালী করেছে এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্চে, শিনজিয়াংয়ের CCP সেক্রেটারি মা শিংরুই ওই প্রদেশে ইসলামের সিনিকাইজেশনকে একটি “অপরিহার্য প্রবণতা” বলে অভিহিত করেছেন।
ভারতে ২০২৪ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে খারাপ হতে থাকে। বিশেষভাবে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে নিউইয়র্কে একজন আমেরিকান শিখ নাগরিক হত্যাচেষ্টায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে ইউএসসিআইআরএফ।ফোলে ভারতে- 'র' এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুতরভাবে লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি।
ইরান- ২০২৪ সালে, ইরানে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি খারাপ থাকতে থাকে, বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, ধর্মীয় প্রতিবাদীদের, এবং মহিলা ও মেয়েদের জন্য। কর্তৃপক্ষরা ধর্মীয় কারণে আটককৃত বন্দীদের শারীরিক নির্যাতন ও কঠোর শাস্তি দেয়, যার মধ্যে চিকিৎসা সেবা অস্বীকারও অন্তর্ভুক্ত। সরকার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে
রাশিয়া- ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং তাদেরকে হিজবুত তাহরিরের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ৩৫২ জন বন্দী ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য শাস্তি ভোগ করছে এবং তাদের অধিকাংশের শাস্তি ১৫ বছরের বেশি।
সৌদি আরবের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি কিছু উন্নতির পরেও খারাপ রয়ে গেছে। শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে, এবং শিয়া ধর্মীয় গান পরিবেশনকারী আল-সাফা ফুটবল ক্লাবের ১২ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। এছাড়া, সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০০টিরও বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যার মধ্যে শিয়া মুসলমানরা ধর্মীয় বৈষম্য বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মৃত্যুদণ্ডের শিকার হয়।
এছাড়াও, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, কিউবা, এরিত্রিয়া, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতেও ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে। এসব দেশের সরকারগুলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচার, নিপীড়ন এবং বৈষম্য অব্যাহত রেখেছে।