গাজায় এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন কোনো উৎসবের বার্তা নিয়ে আসেনি; বরং ক্ষুধা, মৃত্যু আর ধ্বংসস্তূপের মাঝে দিন কাটাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।
সাধারণত রমজান শেষে ঈদুল ফিতর আনন্দ আর পরিবারের সঙ্গে উদযাপনের দিন হলেও, গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজায় খাবার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, আর যুদ্ধের শেষ কবে হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ঈদের নামাজের জন্য বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মসজিদের বাইরে সমবেত হন। ডেইর আল-বালাহর অধিবাসী আদেল আল-শায়ের বলেন, “এটা দুঃখের ঈদ। আমরা আমাদের স্বজনদের, সন্তানদের, ভবিষ্যৎকে হারিয়েছি। আমাদের স্কুল, প্রতিষ্ঠান—সব হারিয়েছি।”
তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় তার পরিবারের ২০ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে কয়েকদিন আগেই প্রাণ হারিয়েছে তার চারজন ভাতিজা।
যুদ্ধের ভয়াবহতা ও মানবিক সংকট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলার পর যুদ্ধ শুরু হয়। ঐ হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। বর্তমানে ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরপর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য। তবে ইসরায়েল দাবি করছে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ২০,০০০ হামাস যোদ্ধা রয়েছে, যদিও এর কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি।
ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযানে গাজার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়।
যুদ্ধবিরতির অনিশ্চয়তা
সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। মিশর ও কাতারের নতুন এক সমঝোতা প্রস্তাবে হামাস সম্মতি দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে আলাদা একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই নিশ্চিত কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।
এমন পরিস্থিতিতে গাজার বাসিন্দা সাঈদ আল-কুর্দের বক্তব্য, “আমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঈদের নামাজে বের হই, যেন অন্তত শিশুদের একটু খুশি দেওয়া যায়। কিন্তু ঈদের আনন্দ? গাজায় এখন ঈদ বলে কিছু নেই।”