ইরানী কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো দেশটির ড্রেস কোড আইনের কঠোর বাস্তবায়নের দাবিতে একটি প্রতিবাদ ছত্রভঙ্গ করেছে। শুক্রবার রাতে, রাষ্ট্রের আয়োজিত কুদস দিবসের পর যে সমাবেশগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল, সেগুলোর পর পুলিশ সংসদের সামনে কয়েক সপ্তাহ ধরে অবস্থানরত প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রতিবাদকারীরা মূলত মহিলাদের নিয়ে গঠিত ছিলেন, যারা পুরো শরীর ঢাকার কালো চাদর পরিধান করে সেখানে অবস্থান করেছিলেন। তারা প্রায় ৫০ দিন ধরে দাবি জানাচ্ছিলেন যে, ইরানের বাধ্যতামূলক হিজাব আইন যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না, যা তাদের মতে "ইসলামিক মূল্যবোধের পরিত্যাগ" হিসাবে দেখা হচ্ছে।
এছাড়াও, ইরানে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকেই পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কঠোর ড্রেস কোড আইন চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে মহিলাদের জন্য হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক। এ আইনের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন এবং প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০২২ সালে, যখন ২২ বছর বয়সী কুর্দি মহিলা মাহসা আমিনি তেহরানে হিজাব আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে নিহত হন, যা ইরানে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি করে।
ইরানী কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল যে তারা "গ্যাসট-এ-ইর্শাদ" নামে পরিচিত মোরালিটি পুলিশ বন্ধ করতে যাচ্ছে, তবে ওই পুলিশি দল দ্রুত তেহরানসহ অন্যান্য বড় শহরে ফিরে আসে। এর পর থেকে আরও বেশি নারী ও পুরুষকে হিজাব সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরানের কনজারভেটিভ-প্রাধান্যাধীন পার্লামেন্ট একটি নতুন হিজাব বিল পাস করে, যার মাধ্যমে হিজাব সংক্রান্ত অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি এবং আর্থিক জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা হয়। তবে, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তার সরকারের পক্ষ থেকে বলেছিলেন যে, এই বিল বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন হবে।
এরই মধ্যে, কর্তৃপক্ষ নতুন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে জনসাধারণের স্থানগুলোতে ক্যামেরা স্থাপন করা এবং হিজাব সংক্রান্ত অপরাধের জন্য নারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা অন্তর্ভুক্ত।
তবে, ইরানী পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আইন অনুযায়ী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে হয়। পুলিশ দাবি করেছে যে, ভিডিওতে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা আসলে সাজানো ছিল এবং মহিলাদের আঘাতগুলো তাদের নিজেদের দ্বারা সৃষ্ট।
এদিকে, ইরানের কঠোরপন্থী রাজনীতিকরা প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন, এবং এই সিদ্ধান্তকে "বোকামি" বা "ভেতরের ষড়যন্ত্র" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন