মিয়ানমারে গত শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২,৭১৯-এ পৌঁছেছে, এবং মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন আং হ্লাইং জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ৩,০০০ ছাড়াতে পারে। আহত হয়েছে ৪,৫২১ জন এবং ৪৪১ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প, যা ম্যান্ডালয়ে এবং রাজধানী নেপিদোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। হাজার হাজার প্রাচীন প্যাগোডা ও আধুনিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। মিয়ানমারে ৫৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটি ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে, যা ভূমিকম্পের পর আরো সংকট সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের হাসপাতালগুলো এখন বিপর্যস্ত, উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বেসামরিক যুদ্ধ পরিস্থিতি ও অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউএনসেফ-এর জুলিয়া রেস বলেন, "সম্পূর্ণ সম্প্রদায়গুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং ধ্বংসের পাশাপাশি মানসিক আঘাতও বিপুল। এবং এই সংকট এখনও চলছে। ভূমিকম্পের পরও আফটারশক আঘাত হানছে। উদ্ধার কাজ চলছে এবং লাশ এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে তোলা হচ্ছে।"
বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা জানাচ্ছে, এখন তীব্র খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের সংকট রয়েছে এবং সাহায্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে একমাসের একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যাতে ত্রাণ সাহায্য দ্রুত পৌঁছাতে পারে। তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে বিদ্রোহীরা সংকটের সময়ও আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
থাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যেখানে রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন স্কাইক্র্যাপার ধসে পড়েছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষের জীবিত থাকার আশা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে, তবে সময় অনেক বেশি পেরিয়ে গেছে।
বিশ্বজুড়ে মানবিক সংস্থাগুলি এই সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপের জন্য আহ্বান জানিয়েছে, কারণ মিয়ানমারে ত্রাণ পৌঁছানো এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা একেবারে কঠিন হয়ে পড়েছে।