ইরানের অভিজ্ঞ ও কৌশলী কূটনীতিক আব্বাস আরাকচিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওমানে অনুষ্ঠেয় এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাত এড়ানোর শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব আরাকচির কূটনৈতিক দক্ষতার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই সময়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন আব্বাস আরাকচি।”
যুদ্ধের হুমকি, আলোচনা ঘিরে সংশয়
এই আলোচনার পটভূমিতে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক হুমকি, যেখানে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন—চুক্তি না হলে ইরানকে বোমা হামলার মুখোমুখি হতে হবে। ওমানে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকটি সরাসরি হবে কি না, তা নিয়ে দুই পক্ষের বক্তব্যে পার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্প বলছেন ‘ডাইরেক্ট টক’, আর তেহরান বলছে ‘ইনডাইরেক্ট’।
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রয়েছেন স্টিভ উইটকফ, যিনি একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, তবে পররাষ্ট্রনীতি বা পরমাণু ইস্যুতে তাঁর কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
‘সঠিক মানুষ, সঠিক সময়ে’
আব্বাস আরাকচির জীবন কাহিনী রীতিমতো এক বিপ্লবী যাত্রাপথ। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী এই কূটনীতিক ইরান-ইরাক যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, তারপর কূটনীতিক হিসেবে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। তিনি ফিনল্যান্ড ও জাপানে ইরানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং ২০১৩ সালে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে আরাকচি ছিলেন কেন্দ্রীয় আলোচক। পশ্চিমা কূটনীতিকদের মতে, “তিনি কঠিন আলোচনা পরিচালনায় পারদর্শী, টেকনিক্যালি দক্ষ এবং সৎ কূটনীতিক।”
২০১৮ সালে ট্রাম্প ঐ চুক্তি বাতিল করে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর বাইডেন প্রশাসনের সময় তিনি আবার আলোচনায় থাকলেও তা সফল হয়নি। পরবর্তীতে তাঁকে ইরানের কৌশলগত পররাষ্ট্র পরিষদের সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত করা হয়—একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ যা সরাসরি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেইয়ের পরামর্শমূলক বোর্ড।
রাজনৈতিক সমীকরণে আরাকচির গুরুত্ব
ইরানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকলেও আরাকচি সব পক্ষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “তিনি সুপ্রিম লিডার, রেভল্যুশনারি গার্ডস এবং রাজনৈতিক সব গোষ্ঠীর সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।”
তিনি বর্তমানে দ্বিতীয় বিবাহিত জীবন যাপন করছেন এবং তাঁর রয়েছে তিন সন্তান।
আসন্ন আলোচনার সাফল্য নির্ভর করছে এই অভিজ্ঞ কূটনীতিকের দক্ষতা ও রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার ওপর। এ আলোচনা কেবল একটি চুক্তির নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও যুদ্ধ এড়ানোর নির্ণায়ক মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স