মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত ভূরাজনীতির আবহে আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে শান্তিপূর্ণ উপকূলীয় শহর মাসকাট। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে এই শহরে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমবার।
এই আলোচনার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কোনো চুক্তির সম্ভাবনা না থাকলেও, এর কূটনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছেন, যদি আলোচনায় অগ্রগতি না হয়। অন্যদিকে, ইরানও ক্রমবর্ধমানভাবে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, কারণ তাদের ইউরেনিয়াম মজুদের বড় অংশ ইতোমধ্যে অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় পৌঁছে গেছে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আলোচনার মঞ্চ হিসেবে আবারও উঠে এসেছে ওমান, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পুরনো সুলতানত। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস ও ইরানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ওমানকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
‘ওমানিব্যালেন্সিং’-এর পুনরাবৃত্তি
ওমানের ৫.২ মিলিয়ন জনগণ ও সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে এই দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই ‘শান্ত কূটনীতি’র নীতিতে বিশ্বাসী। ইতিহাসবিদ মার্ক জে. ও’রেইলি ২৫ বছর আগেই ওমানের এই ভূমিকাকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘Omanibalancing’ নামে। শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ এবং আলোচনামুখী অবস্থানের কারণে ওমান সব পক্ষের সাথেই কথা বলার সুযোগ পায় — যা এই অঞ্চলে বিরল।
ইরানের সঙ্গে ওমানের সম্পর্ক ১৯৭০-এর দশক থেকেই গড়ে উঠেছে, যখন ইরানের তৎকালীন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ধোফার বিদ্রোহ দমনে ওমানকে সামরিক সহায়তা দিয়েছিলেন। সেই সম্পর্ক এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আলোচনার চ্যালেঞ্জ
এই আলোচনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর জনসমক্ষে আসা। সাধারণত ওমান গোপনীয়তার সঙ্গে কূটনৈতিক কাজ করে থাকে। অথচ এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হঠাৎ করেই হোয়াইট হাউজ থেকে আলোচনার ঘোষণা দিয়ে দেন।
অন্যদিকে, আলোচনা কীভাবে হবে তা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। ইরান জানিয়েছে, আলোচনা হবে পরোক্ষভাবে, যেখানে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্তা আদান-প্রদানের মধ্যস্থতা করবেন। কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন, এটি সরাসরি আলোচনা হবে।
ইরানের অবস্থান
ইরান বর্তমানে ৬০% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে — যা অস্ত্র তৈরির মাত্রার খুব কাছাকাছি। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ‘লিবিয়া মডেল’-এর মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসের কথা বলেছে, তবে ইরান সে পথে হাঁটবে না বলেই জানিয়েছে। তারা বারবার গাদ্দাফির পতনের কথা তুলে ধরেছে, যা পশ্চিমা শক্তির ওপর তাদের অনাস্থার বড় কারণ।
তবে আলোচনার কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-ই রাভাঞ্চ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি অপ্রাসঙ্গিক দাবি ও হুমকি থেকে সরে আসে, তাহলে একটি সমঝোতার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”
এই আলোচনায় ওমানের ভূমিকা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নিঃসন্দেহে, এক যুগ ধরে মধ্যপ্রাচ্যে শীতল যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ওমান আবারও প্রমাণ করল— শান্ত কূটনীতি এখনো প্রাসঙ্গিক,