ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ই এপ্রিল। এই রুদ্ধশ্বাস রানঅফে মুখোমুখি হচ্ছেন বামপন্থী লুইসা গনজালেস এবং মধ্য-ডানপন্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া। দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং সহিংস গ্যাং-সংকটের মধ্যেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে — ইকুয়েডর বর্তমানে লাতিন আমেরিকার অন্যতম সহিংস দেশ।
ইতিহাস গড়তে পারেন লুইসা গনজালেস
গনজালেস যদি বিজয়ী হন, তবে তিনিই হবেন ইকুয়েডরের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট — যা দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে তার প্রার্থিতা নিয়ে বিতর্কও কম নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
কোরেয়া একদিকে শ্রমজীবী মানুষের রক্ষক হিসেবে প্রশংসিত, অন্যদিকে তিনি দুর্নীতি এবং গণমাধ্যম দমনসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। ২০২০ সালে আদালত তাকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। বর্তমানে তিনি নির্বাসনে বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন।
গনজালেস প্রকাশ্যেই কোরেয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক তুলে ধরেন। সম্প্রতি তিনি কোরেয়ার জন্মদিনে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায় তারা একসাথে হাসছেন এবং আলিঙ্গন করছেন। তবে এই সম্পর্ক রাজনৈতিকভাবে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে — একদিকে কোরেয়ার অনুসারীদের সমর্থন, অন্যদিকে মধ্যমপন্থী ভোটারদের বিরাগ।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত
প্রথম দফা নির্বাচনে গনজালেস এবং নোবোয়া দুজনেই পেয়েছিলেন ৪৪ শতাংশ ভোট। পার্থক্য ছিল মাত্র ১৬ হাজার ভোট। এবার রানঅফে লড়াই হতে যাচ্ছে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ইকুয়েডরের একটি জরিপ সংস্থা ‘কোমুনিকালিজা’ গনজালেসের পক্ষে ৪৯.৭ শতাংশ এবং নোবোয়ার পক্ষে ৫০.৩ শতাংশ সমর্থন দেখিয়েছে। অন্য জরিপগুলোতে আবার গনজালেস এগিয়ে আছেন।
গনজালেস নিজের প্রচারে শ্রেণিগত পার্থক্যকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “আপনার কাছে হয়তো চিকিৎসা বড় কথা নয়, কারণ আপনি প্রাইভেট প্লেনে নিউ ইয়র্ক আর মিয়ামি ঘুরে বেড়ান। কিন্তু আমাদের জন্য এটা জীবন-মরণ প্রশ্ন।”
গনজালেস: সংগ্রাম থেকে নেতৃত্বে
১৯৭৭ সালে কুইটোতে জন্ম নেওয়া গনজালেস বেড়ে উঠেছেন মানাবি প্রদেশে — কোরেয়ার রাজনৈতিক দর্শন ‘কোরেয়িজম’-এর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজেকে ‘মোন্তুবিয়া’ পরিচয়ে তুলে ধরেন — মানাবি অঞ্চলের একটি মেস্তিজো জনগোষ্ঠীর অংশ হিসেবে।
তিনি বলেন, “আমার নির্বাচিত হওয়া মানে হবে শ্রমজীবী, গ্রামীণ মানুষের বিজয়।” তবে তার কোরেয়ার ছায়ায় বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তাকে বারবার সেই পুরনো বিতর্কে টেনে এনেছে।
গনজালেস কোরেয়ার আমলে একাধিক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তবে সেসময়ই ছিল কোরেয়ার সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায় — গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, আদিবাসী আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির অভিযোগে ভরপুর।
নারীবাদ ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে বিভ্রান্তি
গনজালেসের বামপন্থী অর্থনৈতিক নীতির পাশাপাশি তার রক্ষণশীল সামাজিক মূল্যবোধ অনেক তরুণ ভোটার ও নারীবাদীদের বিভ্রান্ত করেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে গর্ভপাত বৈধ করার বিরোধিতায় তার ভোট বহু প্রগতিশীলকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে ইকুয়েডরের অর্থনৈতিক সংকট, বিভক্ত সংসদ এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা যে কোনো নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্র (আল জাজিরা)