যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে প্রথমবারের মতো দু'দেশের কূটনীতিকরা শনিবার ওমানে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। যদিও তাৎক্ষণিক কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই, তবে এই আলোচনা দীর্ঘকালীন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের আগমন
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে একটি ব্যক্তিগত জেট শনিবার সকালে ওমানে পৌঁছায়। সেখানে ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি শুক্রবারই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অন্যদিকে, ইরানের প্রধান পরমাণু আলোচক আব্বাস আরাকচি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল-বাসাইদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা IRNA জানিয়েছে, আরাকচি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইরানের অবস্থান ও মূল দাবিগুলো তুলে ধরেছেন। তবে আলোচনাগুলো পরোক্ষভাবে (ইনডিরেক্ট) হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
“আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনার বিষয় হবে শুধুই পরমাণু ইস্যু। আলোচনার লক্ষ্য হবে সমান মর্যাদা ভিত্তিক একটি সমঝোতা যা ইরানি জনগণের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে।” — আরাকচি
ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অবস্থান
তবে মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই স্পষ্ট। উল্টে ট্রাম্প ও উইটকফ দু’জনেই আলোচনা “সরাসরি” বলেই উল্লেখ করেছেন।
উইটকফ The Wall Street Journal-কে বলেন:
“আমাদের মূল দাবি হচ্ছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সম্পূর্ণ ভাঙচুর। তবে কোন কোন বিষয়ে আপস সম্ভব, তা সময় বলবে। আমাদের সীমানা এখানেই— কোনোভাবেই ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না।”
ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ও জটিলতা
২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ইরান সর্বোচ্চ ৩.৬৭% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত। তবে এখন দেশটির কাছে ৬০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়ামে পৌঁছাতে মাত্র এক ধাপ দূরত্ব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখন চাইছে অন্তত ২০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ধরে রাখতে, যা আগের আলোচনার মূল অন্তরায় ছিল।
ইসরায়েলের ‘লিবিয়া মডেল’ প্রত্যাখ্যান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু "লিবিয়া মডেল" প্রস্তাব করেছেন— যেখানে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেবে। তবে ইরান এই প্রস্তাব পুরোপুরি নাকচ করেছে।
তারা লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিণতির উদাহরণ টেনে বলে— “যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করলে শেষ পরিণতি কী হতে পারে, তা আমরা দেখেছি।”