গাজা জুড়ে একাধিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাম সানডে-র দিন অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুদেরও নাম রয়েছে। হামলায় উত্তরের আল-আহলি হাসপাতালে আঘাত হানে ইসরায়েলি বাহিনী, যা গাজার উত্তরের শেষ সক্রিয় প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর একটি।
হাসপাতালের পরিচালক ড. ফাদেল নাইম জানান, জরুরি বিভাগ, ফার্মেসি ও আশেপাশের ভবনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে শতাধিক রোগী ও ডজনখানেক স্টাফ আক্রান্ত হন। এক শিশুর মৃত্যু ঘটে ইভাকুয়েশনের সময়, কারণ জরুরি চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ওই হাসপাতালে হামাসের একটি ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে, যদিও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই হাসপাতালটি জেরুজালেমের এপিসকোপাল ডায়োসিস কর্তৃক পরিচালিত, যারা এক বিবৃতিতে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি ঘটেছে খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে পবিত্র সপ্তাহ “হলি উইক”-এর সূচনায়, পাম সানডে-র দিনে।
হাসপাতালের ছাদ ধসে পড়া এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত স্থাপনাগুলোর দৃশ্য এপি ভিডিওতে দেখা গেছে। রোগীদের খোলা আকাশের নিচে বিছানায় নিয়ে যেতে দেখা গেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালটি আপাতত অকার্যকর এবং রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। মানবিক সংস্থা মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি আল-আহলি হাসপাতালের উপর পঞ্চম হামলা।
দেইর আল-বালাহে গাড়িতে হামলা, ছয় ভাই নিহত
রবিবার আরও একটি হামলায় দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জনই ছিলেন একই পরিবারের ভাই। তাদের বয়স ১০ থেকে ৩০-এর মধ্যে। তাদের বাবা জানান, তারা একটি খাদ্য বিতরণকারী দাতব্য সংস্থায় কাজ করতেন।
অন্যান্য হামলায় নিহত আরও অনেকে
জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন নারী। ধ্বংসস্তূপ থেকে এক গর্ভবতী নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তার স্বামী, কন্যা সন্তান ও মা মারা গেছেন।
অন্যদিকে খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ শহরের আরও দুটি স্থানে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ছয়জন।
ইসরায়েলের দাবি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় তারা ৯০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘সন্ত্রাসীদের’ কমান্ড সেন্টার, টানেল এবং অস্ত্রাগার। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
ইয়েমেন থেকেও ক্ষেপণাস্ত্র
ইসরায়েল জানায়, রবিবার ইয়েমেন থেকেও একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রেখেছে।