গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েল ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। সোমবার এ তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনটি জানায়, প্রস্তাবের আওতায় গাজায় আটক বাকি বন্দিদের অর্ধেককে মুক্তি দিতে হবে, তবে অস্ত্র ত্যাগ করার বিষয়টি তাদের জন্য ‘লাল রেখা’।
হামাসের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েল প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির প্রথম সপ্তাহে অর্ধেক বন্দিকে মুক্তি, অন্তত ৪৫ দিনের জন্য অস্ত্রবিরতি এবং গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু হয়, যেদিন হামাস যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। বর্তমানে ইসরায়েলি তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এখনও ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হামাস জানায়, ইসরায়েল অস্ত্র সমর্পণকে স্থায়ী যুদ্ধ সমাপ্তির পূর্বশর্ত হিসেবে প্রস্তাব করেছে, যা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “প্রতিরোধের অস্ত্র একটি অলোপযোগ্য অধিকার ও লাল রেখা। এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।”
হামাসের প্রধান আলোচক দল কাতারে যাচ্ছে, যেখানে এর আগেও ইসরায়েল-হামাসের মূল মধ্যস্থতাকৃত আলোচনা হয়েছে।
হামাস আরও জানায়, “স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলের পূর্ণ撤退 এবং ত্রাণ প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকলে যে কোনো প্রস্তাবেই তারা সম্মত হতে প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, জাতিসংঘ জানায়, গাজা বর্তমানে ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে পারেনি। খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সামগ্রী ও জ্বালানির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে চিকিৎসক আহমেদ আল-ফারাহ বলেন, “সবকিছুর অভাব থাকা সত্ত্বেও আমরা দিনরাত কাজ করছি।”
জরুরি যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান ম্যাক্রোঁ-আব্বাসের ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফোনালাপে গাজায় জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তাঁরা গাজায় ত্রাণ প্রবেশ ত্বরান্বিত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়নের যে কোনো পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন।
ম্যাক্রোঁ বলেন, “ফ্রান্স সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে যুদ্ধ থামানো এবং বন্দিদের মুক্ত করার জন্য।” তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কারেরও আহ্বান জানান, যেন তারা যুদ্ধোত্তর গাজা শাসনে সক্ষম হয়।
হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু জানান, “বন্দির সংখ্যা মুখ্য নয়, বরং ইসরায়েল বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—আমরা অস্ত্র ছাড়ব না।”
ফ্রান্সের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির ইঙ্গিত ও ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “এই রাষ্ট্র একমাত্র উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে ধ্বংস করা। তাই এটি স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা মারাত্মক ভুল।”
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির নতুন এই প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগামী দিনগুলোতে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন পথ খুলে যেতে পারে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনেকটাই রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে।