পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনার বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ি বলেছেন, তিনি “অতিরিক্ত আশাবাদী নন, আবার নিরাশাও নন”। তার এই মন্তব্যকে তেহরানের পক্ষ থেকে জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উচ্চ প্রত্যাশাকে কিছুটা ঠান্ডা করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনাকে উভয় পক্ষই ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এরপর থেকেই অর্থনৈতিক স্বস্তির আশায় ইরানিদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ফোনে পাওয়া প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা ও বৈদেশিক চাপের অবসান এখন খুব কাছাকাছি।
আগামী ১৯ এপ্রিল আবারও ওমানে আলোচনায় বসবে দুই দেশ। ইতোমধ্যে ইরানের বিপর্যস্ত রিয়াল মুদ্রা ডলারের বিপরীতে প্রায় ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে খামেনেয়ি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, “আলোচনা একটি প্রক্রিয়া মাত্র, যার প্রথম পদক্ষেপগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে এর ফলাফল আসবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। আমাদের উচিত আলোচনাকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া এবং দেশের ভাগ্যকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না করা।”
তিনি আরও বলেন, “আলোচনায় আমাদের লাল রেখাগুলো স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে – আমাদের জন্যও এবং তাদের জন্যও।”
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয় জাতির সঙ্গে ইরানের করা ঐতিহাসিক ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইরানে চরম মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং বিনিয়োগের ঘাটতির সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতেই খামেনেয়ি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় সম্মতি দেন, যদিও ট্রাম্পের প্রতি সন্দেহ এখনো রয়ে গেছে।
ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্ব বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরিতাকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও জনগণের দুর্ভোগ সরকারকে আপসের পথে নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শেষ কথা: খামেনেয়ির সাম্প্রতিক মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তেহরান চুক্তির সম্ভাবনা থাকলেও তা নিয়ে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখাতে চায় না। বাস্তবতা ও কৌশলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে এগোচ্ছে ইরান।