গাজা সংকট ঘনীভূত হচ্ছে প্রতিদিনই। ইসরায়েলের ছয় সপ্তাহের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস, যেখানে গোষ্ঠীটিকে নিরস্ত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এক শীর্ষস্থানীয় ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটিতে যুদ্ধ বন্ধ কিংবা ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না — যা হামাসের প্রধান দাবি।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসের একজন সেলের প্রধানকে লক্ষ্য করে খান ইউনুসে একটি ফিল্ড হাসপাতালের পাশে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে একজন নিরাপত্তা রক্ষী নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে হাসপাতালের কর্মী ও রোগী রয়েছেন।
এদিকে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি বর্তমানে "১৮ মাসের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ" অবস্থায় পৌঁছেছে। গত ছয় সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজার ভেতরে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়নি, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের দাবি — যে গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে — তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এই অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই সরবরাহ বন্ধের উদ্দেশ্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যেন তারা জিম্মিদের ছেড়ে দেয় ও অস্ত্রবিরতি বাড়াতে বাধ্য হয়। তবে হামাস জানিয়েছে, তারা সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত — যদি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়।
বর্তমানে গাজায় আনুমানিক ২৪ জন জীবিত জিম্মি রয়েছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, তারা দুর্বিষহ অবস্থায় বন্দিত্বে ছিলেন, অনেকেই আহত এবং চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। আল আহলি আরব হাসপাতাল ও কুয়েতি ফিল্ড হাসপাতালের ওপর হামলায় কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাগুলোকে "গভীরভাবে উদ্বেগজনক" বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, ইসরায়েলের ভেতরে জনগণের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে। জনমত জরিপ বলছে, অধিকাংশ ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি অস্ত্রবিরতির পক্ষে। তবে সরকারে থাকা উগ্রপন্থী দলগুলো যুদ্ধ বন্ধ হলে জোট ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
বর্তমানে গাজার ৭০ শতাংশ অঞ্চল "নো-গো জোন" হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার চলাচলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এই সংকটের মধ্যে মিশর একটি সংশোধিত অস্ত্রবিরতি প্রস্তাব হামাসের কাছে পেশ করেছে, যা গোষ্ঠীটি এখন বিবেচনা করছে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য। অন্যদিকে, ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত কোনো রাজনৈতিক সমাধান না আসে, তাহলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।