গাজায় চলমান যুদ্ধ থামিয়ে ১০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করার শর্তে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস জানিয়েছে, তারা এই প্রস্তাব "পর্যালোচনা করছে"। সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় একটি ৪৫ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চালাবে। ইসরায়েল প্রস্তাবে গাজা অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের দাবি জানিয়েছে, যা হামাসের জন্য আগেও "রেড লাইন" ছিল। তবে এই প্রস্তাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি — যা হামাসের অন্যতম প্রধান দাবি।
হামাস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবে না যেখানে তাদের নিরস্ত্রীকরণ বা ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় পুনরায় প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়।
এই প্রস্তাব মার্চ মাসে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর পর ইসরায়েলের প্রথম বন্দিমুক্তির উদ্যোগ। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের পরিবারের এবং সেনা রিজার্ভ সদস্যদের তীব্র চাপের মুখে রয়েছেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি-আমেরিকান নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই মুক্তি দেওয়া হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি "বিশেষ অঙ্গীকার" হিসেবে। তবে হামাসের সামরিক শাখা দাবি করেছে, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের পর আলেকজান্ডারকে পাহারা দেওয়া ইউনিটের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
হামাস সূত্রে আরও জানা যায়, দুই ধাপে আরও ৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, বিনিময়ে আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১২০ জন ফিলিস্তিনি এবং অক্টোবর ৭-এর পর আটক হওয়া ১,১০০-রও বেশি বন্দিকে ছেড়ে দিতে হবে।
চুক্তির অন্যান্য অংশে বলা হয়েছে —
৪৫ দিনের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি
সামরিক অভিযান বন্ধ
গাজায় মানবিক সহায়তা ও খাদ্য প্রবেশের অনুমতি
গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার (রাফাহ, গাজা সিটি পূর্বাঞ্চলসহ কয়েকটি এলাকা থেকে)
উভয় পক্ষ মৃতদেহ বিনিময়ে সম্মত (১৬ জন ইসরায়েলি মৃতদেহের বিনিময়ে ১৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ)
এছাড়া, প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন থেকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে, যা ৪৫ দিনের মধ্যেই শেষ করতে হবে।
হামাস ও ইসরায়েল দুই পক্ষই কায়রোতে মধ্যস্থতাকারী মিশর ও কাতারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তবে ইসরায়েল এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, হামাসের ঊর্ধ্বতন নেতা মাহমুদ মারদাওয়ি বলেন, “হামাস সব সময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলোচনা করেছে, তবে কেবল ‘খাদ্য-প্রতি-বন্দি’ ভিত্তিক বিচ্ছিন্ন চুক্তি আমাদের গ্রহণযোগ্য নয়।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা আমাদের সব যুদ্ধলক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা জিম্মিদের মুক্তি চাই।”
তবে তার সরকারে থাকা উগ্র ডানপন্থী দলগুলো যুদ্ধ থামানো হলে জোট ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
গাজায় মানবিক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে এখন পর্যন্ত ১,৫০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, চূড়ান্ত চুক্তি আদৌ হবে কিনা — তা এখনও অনিশ্চিত।