জনপ্রিয় বৈশ্বিক গণমাধ্যমে এপি'র প্রতিবেদনে বলা হয়- ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর প্রায় ১,০০০ জন সাবেক সদস্য সম্প্রতি গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করলে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয় যে কোনো সক্রিয় রিজার্ভ সেনা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করলে তাকে বরখাস্ত করা হবে।
তবে এর পর থেকেই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার সাবেক ও রিজার্ভ সেনা যুদ্ধ বিরোধী একই ধরনের চিঠিতে স্বাক্ষর করতে শুরু করেছেন।
এই ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ আন্দোলন সরকারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছে এবং গাজায় জিম্মিদের উদ্ধারে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেছে। এর ফলে ইসরায়েলি সমাজে যুদ্ধ নিয়ে গভীর বিভাজন ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে, যা জাতীয় ঐক্যকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
যুদ্ধ শুরুর পটভূমি ও প্রতিবাদের কারণ
গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাসের আকস্মিক হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এই ঘটনার পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শুরু থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, হামাসকে ধ্বংস এবং জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনাই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এক মাস আগে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে একটিও জিম্মিকে উদ্ধার করা যায়নি।
প্রতিবাদী চিঠিতে সই করা সাবেক বিমানচালক গাই পোরান বলেন, “যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে, নিরাপত্তার স্বার্থে নয়।”
সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধ
যদিও অধিকাংশ স্বাক্ষরকারী সাবেক সেনা, তারা নিজেদের পরিচয় সাবেক পাইলট বা স্পেশাল ইউনিটের সদস্য হিসেবে প্রকাশ করেছেন, যাতে সমাজে শক্ত বার্তা দেওয়া যায়।
প্রতিবাদে সক্রিয় ১০,০০০ সাবেক সেনার পাশাপাশি একাডেমিক, চিকিৎসক, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত, ছাত্রছাত্রী ও হাই-টেক পেশাজীবীরাও সই করেছেন যুদ্ধ বিরোধী চিঠিতে।
যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই জনসমর্থন কমছে। জেরুজালেমের ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, জানুয়ারি ২০২৪-এ যেখানে মাত্র ৫০% ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তিকেই অগ্রাধিকার দিতেন, এখন তা বেড়ে ৭০% হয়েছে।
তবে ৬০% ইসরায়েলি মনে করছেন, নেতানিয়াহুর দুইটি লক্ষ্য—হামাসকে ধ্বংস এবং জিম্মিদের মুক্তি—একসঙ্গে অর্জন করা সম্ভব নয়।
প ও সংকট
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা “রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে” থাকতে চায়। কিন্তু বাস্তবে রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে ক্লান্তি, আর্থিক চাপ ও রাজনৈতিক অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে ডিউটিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
সামরিক বাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে নতুন রিজার্ভ সেনা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
সাবেক প্যারাট্রুপার এরান ডুভদেভানি বলেন, “যদি পাইলটদের ছাঁটাই করা হয়, তবে বাকিদের কী হবে যারা একই চিঠিতে সই করেছেন?”
অন্যদিকে নেতানিয়াহু তার অফিস থেকে বারবার বলছেন, তিনি জিম্মিদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি তিনি গাজার উত্তরে সেনাদের সঙ্গে সফর করে বলেন, “আমরা অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ করছি, ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ করছি।”
ইসরায়েলে যুদ্ধ এখন শুধু গাজার সীমান্তে নয়—তা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের গভীরে, সেনাবাহিনীর মধ্যেও। যুদ্ধের দীর্ঘায়ন ও লক্ষ্য অর্জনের অনিশ্চয়তা দেশের ভেতরে ব্যাপক মতভেদ তৈরি করেছে, যা সামরিক সক্ষমতা ও জাতীয় ঐক্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।