বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাতেও খ্রিস্টান সম্প্রদায় গুড ফ্রাইডে পালন করেছে গভীর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে। গাজা সিটির গ্রিক অর্থডক্স সেন্ট পোরফাইরাস চার্চে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান বিশ্বাসীরা মোমবাতি হাতে প্রার্থনায় অংশ নেন।
গুড ফ্রাইডে হলো খ্রিস্টান ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিন। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালন করা হয় প্রার্থনা, নাটক ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে।
ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানে গাজার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির মধ্যেও, খ্রিস্টানরা শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন। রামেজ আল-সুরি নামে এক স্থানীয় খ্রিস্টান, যিনি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে একটি চার্চে বোমা হামলায় নিজের তিন সন্তানকে হারিয়েছেন, বলেন:
"আমরা এখন সমস্ত ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দিয়ে গাজার জন্য, বিশ্বের জন্য প্রার্থনা করছি যেন এই যুদ্ধ শেষ হয়। গাজা প্রতিনিয়ত মৃত্যু, ধ্বংস আর সন্ত্রাসে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।"
এদিকে জেরুজালেমে হাজারো খ্রিস্টান ভক্ত ‘ভিয়া ডলোরোসা’ পথে যাত্রা করেন— যেটি যিশু খ্রিস্টের শেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। অনেক ভক্ত এ যাত্রায় অংশ নিয়ে প্রার্থনা করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
নাথানিয়েল হ্যারগ্রেভ, এক পুণ্যার্থী জানান, “আমি এখানে এসেছি এই পবিত্র ভূমির খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়াতে, এমন এক সময়ে যখন যুদ্ধ চলছে। এটা আমার জন্য ভীষণ আবেগময়।”
অন্যদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুড ফ্রাইডে পালিত হয়েছে নানা ঐতিহ্যে। গ্রীসে, এথেন্স শহরের পুরনো সেন্ট দিমিত্রিয়োস চার্চ থেকে মোমবাতি মিছিল বের হয় প্রাচীন অ্যাক্রোপলিসের ছায়ায়। ফ্রান্সে, ছয় বছর পর নটর ডেম ক্যাথেড্রালে আবারো ইস্টার পালিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার কেট নটন বলেন, “আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল এখানে আসা। আজ সেটা পূরণ হলো।”
লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়, যা হাজার হাজার দর্শক উপভোগ করেন। এক দর্শক বলেন, “ক্ষমা-ই সবকিছুর মূল। এটা কঠিন, কিন্তু সেটাই সঠিক পথ।”
ফিলিপাইনের পাম্পাঙ্গা প্রদেশে গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে চিরাচরিত পদ্ধতিতে ভক্তরা প্রকৃতপক্ষে ক্রুশবিদ্ধ হন। এই রীতিতে দু-ইঞ্চি দীর্ঘ পেরেক দিয়ে হাত ও পায়ে আঘাত করে তাদের উঁচু কাঠের ক্রুশে ঝুলানো হয়। দর্শনার্থীরা বলেন, “এটি দুঃখজনক হলেও চমৎকার, অত্যন্ত আবেগঘন।”
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে হাজারো মানুষ মরুভূমি পেরিয়ে একটি ঐতিহাসিক চার্চে যান। ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা জুয়ান গ্রিয়েগো বলেন, “এ বছর আমি নিজের জন্য হাঁটছি। আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এছাড়াও ২০২১ সালে আমি ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর মৃত্যু দেখি, এরপর ভাইপোকেও হারাই। কিন্তু আমরা এখনো কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বাঁচছি, এই যাত্রা আমাদের আত্মিক শক্তি জোগায়।”
বিশ্বের নানা প্রান্তের ভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবেগে মোড়া গুড ফ্রাইডে আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো মানবতার, আত্মত্যাগের এবং আশার বার্তা।