আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে তৃতীয় ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠীগুলোর প্রচারণায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন সরকার। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে "চলমান ধর্মীয় উস্কানি" হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হিব্রু ভাষার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস এবং “তৃতীয় উপাসনালয়” নির্মাণের চিত্র দেখানো হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল: “আগামী বছর জেরুজালেমে”।
মন্ত্রণালয় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই প্রচারণাকে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত উস্কানি এবং আগ্রাসনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছি। বিশেষ করে জেরুজালেমে অবস্থিত ইসলামি ও খ্রিস্টান পবিত্র স্থানগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।”
আল-আকসা: ধর্মীয় গুরুত্ব এবং উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু
ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের জন্য তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। মসজিদ প্রাঙ্গণটি জর্ডানের তত্ত্বাবধানে থাকলেও এর প্রবেশ এবং নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে।
গত বছর থেকে আল-আকসায় নিয়মিতভাবে উগ্র ডানপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিক ও বসতি স্থাপনকারীরা ঢুকে ধর্মীয় আচার পালন করছেন, যা বিদ্যমান ‘স্ট্যাটাস কো’-এর পরিপন্থী। এই নিয়ম অনুযায়ী, অ-মুসলিমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারলেও প্রার্থনা করা বা ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শন নিষিদ্ধ।
ধর্মীয় উস্কানি ও রাজনৈতিক প্রভাব
২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির অন্তত ছয়বার আল-আকসা পরিদর্শন করেছেন, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত আগস্টে তিনি সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে জানান, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিন্দিত হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের মতো এখানেও বিভাজনের মাধ্যমে দখলদারিত্ব কায়েমের ষড়যন্ত্র চলছে।
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এ ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।”