আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ফিলিস্তিনি সরকার ইসরায়েলি বসতকারীদের পক্ষ থেকে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস ও তার স্থলে তথাকথিত ‘তৃতীয় মন্দির’ নির্মাণের আহ্বানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হিব্রু ভাষার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর এই ধরনের উসকানিমূলক ভিডিও ও বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে, যা ধর্মীয় উসকানি এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি এআই (AI)-নির্মিত ভিডিওতে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের কল্পচিত্র দেখানো হয়েছে, যার শিরোনাম ছিল “পরবর্তী বছর জেরুজালেমে”। এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি বা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বেগ:
“এই উসকানিমূলক প্রচারণা শুধু আল-আকসা নয়, বরং জেরুজালেমে খ্রিস্টান ও ইসলামি ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর ওপর ধারাবাহিক আক্রমণের অংশ,” — এক্স (X)–এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানায় মন্ত্রণালয়।মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল -আকসা মসজিদ যে কোন মূল্য রক্ষা করবো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সরকার
আল-আকসা মসজিদ: উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু
আল-আকসা মসজিদ মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র স্থান এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। এটি জর্ডানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও এর প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি ডানপন্থী রাজনীতিক ও বসতকারীরা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এই মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করে, এবং অনেক সময় তারা সেখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে, যা বিদ্যমান ‘স্ট্যাটাস কু’র লঙ্ঘন।
ইহুদিদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানেই প্রথম ও দ্বিতীয় মন্দির অবস্থান করত, দ্বিতীয়টি ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ধ্বংস করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পুরনো নীতিমালায় বলা আছে, অমুসলিমরা নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করতে পারবে, তবে সেখানে উপাসনা বা ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শন নিষিদ্ধ।
চরমপন্থার উত্থান ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ডানপন্থী ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ২০২৩ সালে ঘোষণা দেন যে তিনি আল-আকসা চত্বরে একটি ইহুদি সিনাগগ নির্মাণ করতে চান, যা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়বার আল-আকসা সফর করেছেন।
ফিলিস্তিনিরা আশঙ্কা করছেন, হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের মতো এখানেও ধর্মীয় স্থান বিভাজনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্লেষণকারীদের মতে, এসব পদক্ষেপ শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, গোটা বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ তৈরি করছে।