আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-দীর্ঘ এক বছরের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের পরে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে হাঁটছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। গত ১৯ এপ্রিল পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার কাবুল সফর করেন, যা ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর কোনো শীর্ষ পর্যায়ের পাকিস্তানি কর্মকর্তার প্রথম আফগান সফর।
এই সফরকে দুই দেশের মধ্যে বরফ গলার প্রথম ধাপ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। এর কয়েকদিন আগেই সামরিক ও গোয়েন্দা পর্যায়ের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কাবুলে, যা সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ইস্যুতে আলোচনা
দার বৈঠক করেন আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কির সঙ্গে। বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, ট্রানজিট, আঞ্চলিক সংযোগ এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ক নানা দিক।
তবে আফগান পক্ষ নিরাপত্তা ইস্যু বাদ দিয়ে মূলত শরণার্থীদের অবস্থা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, এবং যৌথ প্রকল্পগুলোর ওপর জোর দেয়।
দার বলেন, “আমরা একে অপরের মাটি সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার না করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এই অঞ্চলের শান্তি ও অগ্রগতির জন্য একসঙ্গে কাজ করা অপরিহার্য।”
তালেবান শাসন ও নিরাপত্তা সংকট
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে বহু হামলার জন্য পাকিস্তান দায়ী করে পাকিস্তান তালেবান (TTP) গোষ্ঠীকে, যারা পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী আফগান মাটি ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।
পাকিস্তানে ২০২৪ সালে ৫২১টি হামলা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি। প্রাণ হারিয়েছেন ৮৫২ জন, যাদের মধ্যে ৩৫৮ জন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
এই সহিংসতার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান শুরু করে আফগান শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ আফগানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
নতুন কূটনৈতিক সম্ভাবনা
দারের সফরকে অনেকেই বলছেন ‘বরফ গলার সূচনা’। দ্য খোরাসান ডায়েরির সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতিখার ফিরদৌস বলেন, “এই সফর ব্যাকচ্যানেল আলোচনার ফলাফল। এটি কোনো নতুন শুরু নয়, বরং পুনঃসম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ।”
ISSI-এর পরিচালক আমিনা খান বলেন, “পাকিস্তানের জন্য নিরাপত্তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কাবুলের জন্য বাণিজ্যও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনে একটি সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক রূপরেখা প্রয়োজন।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও প্রতিক্রিয়া
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান গোপনে TTP-কে প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন করছে। যদিও তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ এটিকে ‘অপবাদ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, TTP যদি আইএসআইএলের (ISIL) সঙ্গে জোট বাঁধে, তবে সেটি তালেবান সরকারকেই বিপদে ফেলতে পারে। আমিনা খান বলেন, “এখন প্রয়োজন ধারাবাহিক সংলাপ ও সম্পর্কের সব মাত্রাকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।”