লন্ডন- এপি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশসমূহ ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা গত বুধবার লন্ডনে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন, যার লক্ষ্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তির পথ তৈরি করা। এটি প্যারিসে অনুষ্ঠিত গত সপ্তাহের আলোচনার পরবর্তী ধাপ।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি বলেন, আলোচনায় একটি সম্ভাব্য অস্ত্রবিরতির রূপরেখা ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে বৈঠকে বিদেশমন্ত্রীদের অংশগ্রহণের যে পরিকল্পনা ছিল, তা শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়, কারণ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সময়সূচির জটিলতার কারণে আসতে পারেননি বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানান, বৈঠকে এখন “কর্মকর্তারা” অংশ নিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলোগ, যিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত।
এই বৈঠক এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন গুজব বাড়ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়াকে দিয়ে শান্তি আনতে চাপ দিতে পারে। গত সপ্তাহে প্যারিসে অনুরূপ এক বৈঠকে, মার্কিন কর্মকর্তারা একটি প্রস্তাব পেশ করেন যাতে রাশিয়াকে দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ধরে রাখার অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়—একটি ইউরোপীয় কর্মকর্তা এমনটাই জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “এ নিয়ে কোনো আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না — এটা আমাদের ভূমি, ইউক্রেনীয় জনগণের ভূমি।”
একজন ফরাসি কর্মকর্তা বলেন, “যদি অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি অর্জন করতে হয়, তাহলে তা বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরে হতে হবে।” তবে ইউরোপীয়দের মতে, ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই এখন তাদের প্রধান অগ্রাধিকার।
ব্রিটেন বলেছে, তারা কোনো তাৎক্ষণিক অগ্রগতির প্রত্যাশা করছে না, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সপ্তাহ। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেন, আলোচনা এখন “একটি সংকটপূর্ণ মুহূর্তে” এসে পৌঁছেছে এবং দুই পক্ষ যদি শান্তির দিকে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় অংশ নেওয়া থেকে “পিছু হটতেও পারে”।
রুবিওও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে আলোচনা যদি এগোয় না, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পৃক্ততা বন্ধ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, বুধবারের বৈঠক এই বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক হতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কো কোনো তাড়াহুড়ো করে আলোচনায় যেতে চায় না, কারণ রাশিয়ার এখন মাঠে কৌশলগত সুবিধা রয়েছে, এবং তারা আরও ইউক্রেনীয় ভূমি দখলের চেষ্টা করছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের মুখপাত্র ডেভ পেয়ার্স বলেন, “এখন বল রাশিয়ার কোর্টে। পুতিন যদি সত্যিই শান্তি চান, তাহলে এখনই তার তা প্রমাণ করার সময়।”
জেলেনস্কি মঙ্গলবার বলেন, যুক্তরাজ্যে যাওয়া ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল শুধু একটি নিঃশর্ত বা আংশিক অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। তিনি বলেন, “একটি অস্ত্রবিরতির পর আমরা যেকোনো ফরম্যাটে আলোচনা করতে প্রস্তুত।”
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “শান্তি স্থাপনের বিষয়টি এতটাই জটিল যে, এটিকে কোনো কঠোর সময়সীমার মধ্যে ফেলা বা তাড়াহুড়ো করে নিষ্পত্তি করা বোকামি হবে।”