ঢাকামঙ্গলবার , ৪ মার্চ ২০২৫
  1. Global News
  2. অপরাধ
  3. অভিযোগ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন-বিচার
  6. আটক
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আবহাওয়া
  9. কৃষি-সংবাদ
  10. খেলা-ধুলা
  11. জাতীয়
  12. জীবনযাত্রা
  13. ধর্ম
  14. প্রবাস প্রযুক্তি
  15. ফিচার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইউনেটিয়া ( একটি বিজ্ঞান কল্প কাহিনী) ‘

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
মার্চ ৪, ২০২৫ ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

( এই গল্প বেশ বড়। এখন এতো বড় কাহিনি পড়ার সময় নাই বেশিরভাগ মানুষের। তবে এই কাহিনীতে বাংলাদেশের কিছু বাস্তবতার কথা বলা আছে। এদেশে একটা বড় ধরণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটা বড় ঘটনা এসে আগের সব কিছু আড়াল করে দেয়।

এই গল্পটি অনেক আগের লেখা। প্রায় ৫/৬ মাস আগের। ছাত্র জীবনে প্রথম আলো, ভোরের কাগজে অনেক লেখা ছাপা হতো। ইদানিং এই লেখাসহ বেশ কিছু লেখা মেইল করেছিলাম প্রথম আলোতে। ছাপা হয় নি। বুঝছি, আমার লেখার মান খারাপ হচ্ছে। না হোক ছাপা, আমার ফেসবুক বন্ধুদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে যাই।)

মাঝরাতে একরামুল সাহেব অদ্ভূত একটা স্বপ্ন দেখে হালকা ঠান্ডার মধ্যেও দরদর করে ঘামতে লাগলেন। দেখলেন, মহাশূন্য, গ্যালাক্সি, উল্কা, ধুমকেতু এমন অনেক কিছু। এসবের মাঝ থেকে চ্যাপ্টা, বিশাল এক যান পৃথিবীর দিকে উড়ে আসছে। একরামুল স্বপ্নে মহাশূন্যের এই সৌন্দর্য ভালোই উপভোগ করছিলেন ৷ মনে হচ্ছিল, তিনি নিজেও মহাজাগতিক কোনো বাসিন্দা। বেশ লাগছিল।

ভয় লাগাটা শুরু হলো, যখন দেখলেন, ফ্লাইং সসার টাইপের ওই যানটি থেকে বিকট দর্শন দুই প্রাণি এসে তাকে শোবার ঘর থেকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই তুলে বাইরে নিয়ে গেলেন। ঘুম ভেঙে গেলে তিনি বাধা দিতে চাইলেন। কিন্তু , বাধা দেওয়ার মতো কোনো শক্তি তিনি পাচ্ছিলেন না। জোরে চিৎকার করে স্ত্রী আর ছেলেকে ডাকতে চাইলেন। গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছিল না।

বিকট দর্শন প্রাণী দুটির মধ্যে একজন যান্ত্রিক কন্ঠে বলে উঠলো, ‘’ একরামুল সাহেব, শুনুন। আমরা আপনার কোনো ক্ষতি করবো না। কিছুদিনের জন্য আপনার শরীরে একটা পরিবর্তন করে দিবো। আমাদের কাজ হয়ে গেলে আপনি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবেন।’’

এই কথা বলে প্রাণিটি তার পরনের আলখাল্লার পকেট থেকে কি যেন বের করলেন। একরামুল শুধু চুপচাপ সব দেখছেন। বাধা দেওয়ার বিন্দুমাত্র শক্তি বা ক্ষমতা কোনোটাই তার নেই। তিনি দেখলেন, মনুষ্য সদৃশ প্রাণিটি তার ডানহাতে ইনজেকশন পুশ করছে। সামান্য একটু ব্যাথা অনুভব করলেন একরামুল সাহেব। এরপর প্রাণি দুটি আবার একরামুলকে আলগোছে তুলে নিয়ে এসে বিছানায় তার স্ত্রী আর ছেলের পাশে রেখে দিলেন। একরামুল অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন ছেলে আর স্ত্রী অঘোরে ঘুমাচ্ছে। কিচ্ছুটি তারা টের পেলো না !

প্রাণি দুটির মাঝে দ্বিতীয় জন কোনো কথা বলে নি। সে এবার মুখ খুললো। অবশ্য মুখ বলতে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমাদের যেখানে মাথা থাকে, সেই জায়গায় ওদের চারকোণা কিছু একটা আছে, যার মধ্যে শুধু চোখ দুটি বোঝা যায়। সেখান থেকে নীলাভ আলোর আভা বের হচ্ছে। আমরা যে অংশ দিয়ে খাই বা কথা বলি সেখানে কিচ্ছু নেই। সমান একদম। নাকের জায়গায় একটা বড়সড় ফুটো। কান নেই। তাই কথা কোন জায়গা দিয়ে বের হচ্ছে বুঝতে পারছেন না একরামুল সাহেব।

দ্বিতীয় প্রাণিটির কন্ঠস্বর একরামুলের শরীরে, মনে পুলক ছড়িয়ে দিলো। এতো সুন্দর নারী কন্ঠ কোনোদিন শোনেন নি তিনি। মায়াবী রিনিঝিনি সুরে সে বলে উঠলো, ‘’ একরামুল সাহেব, আপনার শরীরে একটা ইনজেকশন দিয়ে যেমন শারীরিক পরিবর্তন ঘটবে, তেমনি আমরা আপনার মস্তিষ্কে একটা অটো সাজেশন দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য সাধন না হওয়া পর্যন্ত সেই অটো সাজেশন অনুযায়ী আপনি সব কাজ করতে থাকবেন । ভালো থাকুন, আমরা গেলাম। আপনি ভালো মানুষ। আপনার কোনো ক্ষতি হোক এটা আমরা চাই না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন ।’’

কথাগুলো বলেই পিছন ফিরে চলে গেল প্রাণি দুটি। এদিকে একরামুল সাহেব ঘেমেই চলেছেন। চোখ মেলে স্ত্রী আর সন্তানের মাঝখানে নিজেকে আবিস্কার করলেন। স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেন কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলোকে। স্বপ্নই তো, স্বপ্ন ছাড়া আবার কি ! এপাশ ওপাশ ঘোরার চেষ্টা করলেন। এই তো পারছেন। স্বপ্নেই মানুষের ওরকম হয়। নড়াচড়া করতে পারে না, কোনো শক্তি থাকে না, কথাও বলতে পারে না। এপাশ ওপাশ ঘুরতেই দেখলেন, তার পা জোড়া খাটের ও প্রান্তের কাঠে গিয়ে লাগছে। নিশ্চয়ই বালিশ থেকে নিচে নেমে গিয়েছেন। কিন্ত, তা তো না। স্ত্রী আর ছেলের সাথে একই লেভেলে আছেন। তাহলে, পা লাগছে কেন নিচে !

আবার পা জোড়া নড়াচড়া করলেন। এবার ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত মেরুদণ্ড বেয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন, তার হাত জোড়া লম্বা হতে শুরু করেছে। পা দুটি খাটের ওপ্রান্ত ছেড়ে বাইরে জায়গা নিতে শুরু করেছে ! কান দুটিতে হাতে দিয়ে বুঝতে পারলেন, ওগুলো আগেই বড় আকার ধারণ করেছে। মাথাটাও আগের চেয়ে লম্বাটে হয়ে গেছে।

এগুলোও কি স্বপ্ন? পাশে শুয়ে থাকা দুজনের কথা চিন্তা করলেন। যদি সত্যি হয়,তবে এরা ওকে দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে যাবে। চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিবে। ঘুমের মধ্যে আসা প্রাণি দুটির কথা ভাবলেন। তিনি যদি সত্যিই এমন লম্বা হয়ে থাকেন, তাহলে সেসব স্বপ্ন নয়। সত্যিই এসেছিল তারা। তাদের দেওয়া ইনজেকশনেই সম্ভবত একরামুল সাহেব লম্বা হতে শুরু করেছেন। এবার নারীকন্ঠের ওই প্রাণিটির দেওয়া অটো সাজেশন সব মন আসতে শুরু করলো। মস্তিষ্ক ইতোমধ্যে সে অনুযায়ী কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।

তিনি প্রথমেই ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামা শুরু করলেন। পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চির মানুষটি এখন ১২ ফিট লম্বা এক প্রাণিতে পরিণত হয়েছে। দ্বিগুনেরও বেশি বেড়ে গিয়েছেন। দাঁড়াতেই ছাদে গিয়ে মাথা ঠেকলো। শীতের দিন। ফ্যান বন্ধ। ফ্যান চালু থাকলে ফ্যানে কাটা পড়তেন হয়তো। অটো সাজেশন অনুযায়ী প্রথমেই তিনি ওয়াশরুমে ঢুকলেন। ওয়াশরুমের দরজা দিয়ে ঢুকতে বেশ কসরত করতে হলো। ওয়াশরুমের ছাদ তো আরও নিচুতে। ভিতরে ঢুকে নিজের বিশাল শরীরটা নিয়ে মহা অস্বস্তিতে পড়লেন। রাতে শুধু লুঙ্গি পড়ে শুয়েছিলেন। এখন সেই লুঙ্গি হাঁটুর ওপরে।

একরামুল সাহেব দরজা বন্ধ করে স্ত্রীকে ডাকাডাকি শুরু করলেন।

‘’ লতিফা, লতিফা, ওঠো।’’

একরামুল সাহেবের স্ত্রী লতিফা বেগমের ঘুম এমনিতেই গভীর। তারমধ্যে আজ অদ্ভূত প্রাণী দুটি সম্ভবত কোনো চেতনানাশক ব্যবহার করেছিল। নাহলে এতো কিছুর মধ্যেও কি সুন্দর তারা ঘুমালো। তবে ওয়াশরুম থেকে বেশি ডাকাডাকি করতে হলো না। দু’তিনবার ডাকতেই ঘুম থেকে ধড়মড় করে উঠে বসলেন লতিফা বেগম। দেখলেন , পাশে ছেলে ঘুমাচ্ছে। তার স্বামী বিছানায় নাই। বাথরুম থেকে আওয়াজ আসছে। এখন মাঝরাত। বাথরুম থেকে কেন ডাকবে, হঠাৎ ঘুম ভেঙে কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি।

লতিফা বিছানা থেকেই জবাব দিলেন, ‘’ কেন, কি হয়েছে? বাথরুমের ভিতর থেকে ডাকছো কেন? আশ্চর্য তো ! “

একরামুল সাহেব বন্ধ দরজার ওপাশ থেকেই মৃদু স্বরে বলে উঠলেন, ‘’ বিছানা থেকে নেমে বাথরুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়াও । আশ্চর্যের কথাই বলবো ।’’

লতিফা এখন একটু ভয় পেয়ে গেলেন। বিছানা থেকে দ্রুত নেমে বাথরুমের দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন । উৎকন্ঠা ভরা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘’ কি, কি হয়েছে তোমার।’’

একরামুল সাহেব অটো সাজেশন অনুযায়ী গড়গড় করে সব বলে গেলেন। মাঝ রাতে তার সাথে ঘটে যাওয়া অদ্ভূত সব ঘটনার আদ্যপ্রান্ত বর্ণনা করলেন। শুধু এটা যে সাময়িক সময়ের জন্য তা স্ত্রীকে বললেও জনসমক্ষে বলতে কড়াভাবে নিষেধ করে দিলেন। অটো সাজেশনে তাই বলা আছে। সবকিছু সাংবাদিক, পুলিশ, সাধারণ জনতা সবাইকে বলা গেলেও আগের রূপে যে আবার তিনি কিছুদিন পরে ফিরবেন, তা বলা যাবে না। এটা জানবে শুধু তার স্ত্রী আর সন্তান।

লতিফা বেগম সব শুনে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলেও শেষ কথাটা শুনে আশ্বস্ত হলেন। স্বামীকে বললেন বের হয়ে আসতে। একরামুল সাহেব স্ত্রীকে বললেন, ‘’ আগে রনজুকে ঘুম থেকে তুলে সব বলো। আমি হঠাৎ এই অবস্থায় ওর সামনে গেলে ভয়ে মানসিক আঘাত পাবে।’’

লতিফা বেগম রনজুকে ঘুম থেকে তুলে সব বলা শুরু করলেন। ছেলের বয়স সবে নয়। তারপরও অন্যদের চেয়ে জ্ঞানবুদ্ধি বেশ ভালোই। রনজু ভয় পেলেও বাবার এই হঠাৎ পরিবর্তন দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো। আর যখন শুনলো কিছুদিন পর ওর বাবা আবার আগের আকৃতিতে ফিরে যাবে, তখন তার কাছে পুরো ঘটনাটি রোমাঞ্চকর কিছু মনে হলো।

ওয়াশরুমের ভিতরে বিশাল শরীরটা অনেক কষ্টে আটকে রেখেছিলেন একরামুল সাহেব। দেয়ালে, ছাদে শরীরের বিভিন্ন অংশ লেগে আছে। স্ত্রী আর সন্তান যখন বললো, ‘’ বেরিয়ে আসো’’, তখন যেন মহা স্বস্তি পেলেন। ঢুকতে যেমন কষ্ট হয়েছিল, বেরোতে তারচেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হলো।

বাইরে বেরোতেই স্ত্রী আর সন্তান দুজনেই এমন অবাক হলেন যে , সেই অবাকের মাত্রা প্রচন্ড চিৎকারে রূপ নিলো। রনজু দেখলো শুধু বাবার মুখটা দেখে মনে হচ্ছে , এই মানুষটি তার বাবা। অন্য সবকিছু যেন অপরিচিত !

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই একরামুলদের বাসা লোকজন দিয়ে ভরে গেল। লতিফা ফোন করে তাদের আত্মীয় স্বজনদের জানিয়েছিলেন। তারা তাদের পরিচিতদের, পরিচিতরা সাংবাদিকদের, সাংবাদিকেরা পুলিশকে। এভাবে একসময় পুরো দেশ জেনে ফেললো। তাদের ড্রয়িংরুমের মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন একরামুল সাহেব। একপাশে লতিফা, আরেক পাশে রনজু । চিড়িয়াখানার প্রাণীর মতো একরামুলকে দেখছে সবাই। কিছুক্ষণ পরে হয়তো টিকিট কেটে ব্যবস্থা করতে হবে। ইনকাম নেহায়েত কম হবে না। একরামুল মনে মনে একটু হেসে নিলেন। রনজুও বেশ মজা পাচ্ছে। টিভি চ্যানেলের রিপোর্টারেরা কার আগে কে বাবার সাক্ষাৎকার নিবে, সেজন্য ঠেলাঠেলি করছে। সরাসরি সংবাদে দেখা যাচ্ছে তাদের। শুধু লতিফা বেগম কিছুটা লজ্জায় মুখ নিচু করে আছেন।

সারাদেশ তোলপাড়। অটো সাজেশন অনুযায়ী একরামুল সাংবাদিকদের সব ঘটনা বলেছেন। এলিয়েনদের পৃথিবীতে আসা, ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইনজেকশন দেওয়া সব। শুধু বলেন নি যে ওদের উদ্দেশ্য সাধন হয়ে গেলে তিনি আবার আগের আকৃতিতে ফিরে যাবেন। তাই , এখন সাংবাদিক, পুলিশ, জনতার গবেষণার মূল বিষয় যে কারা এসেছিল, তাদের উদ্দেশ্যই বা কি। ভিন গ্রহে যে মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান প্রাণী থাকে, এটা তাহলে প্রমাণিত সত্য হয়ে গেল। বুদ্ধিমান না হলে অন্য গ্রহে এসে ধরা না পড়ে , এতো কিছু করে আবার চলে যাওয়াটা চাট্টিখানি কথা না।

একরামুল সাহেব ঢাকায় থাকেন। রাজধানীতে এমন একটা ঘটনায় সবাই বেশ আতংকিত হয়ে পড়লো। একরামুল সাহেবের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই ঘটনা ঘটলো ময়মনসিংহের একটা উপজেলা শহরে এক স্কুল শিক্ষকের সাথে ঠিক দু’দিন পরে। ভদ্রলোকের নাম রবি সাহা। তিনিও পরদিন সাংবাদিক, পুলিশকে যা বললেন, তা একরামুল সাহেবের বর্ণনার যেন কার্বন কপি।

এভাবে পুরো সপ্তাহ জুড়ে পাঁচজন মানুষের ওপর দিয়ে একই ঘটনা ঘটে গেল। পুরো দেশ আতংকিত হয়ে পড়লো। কোনো সংস্থাই কোনো কুলকিনারা করতে পারলো না। বিদেশের সকল নিউজ মিডিয়ার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষিত হলো বাংলাদেশে। নাসাসহ বিদেশের বিখ্যাত স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানীরা চলে আসলেন এদেশে। স্যাটেলাইটগুলো তাদের নজরদারি বাড়িয়ে দিল।

দুই

পৃথিবী থেকে নয় আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ ইউনেটিয়ার আকার, পরিবেশ প্রায় আমাদের এই প্রিয় গ্রহটির মতো। তাপমাত্রা সবসময় কম থাকে। মাইনাস ১০ ডিগ্রি থেকে স্থানভেদে ৮ ডিগ্রি পর্যন্ত। পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা আছে গ্রহটির সর্বত্র। গাছপালা আছে। তবে গাছের পাতা আমাদের মতো সবুজ নয়। বেশির ভাগ পাতার রঙ লাল কিংবা হলদেটে। অক্সিজেন লেভেল আমাদের পৃথিবীর চাইতে কিছুটা বেশি। এতে আমরা পৃথিবীবাসী অস্বস্তি বোধ করলেও ইউনেটিয়ার অধিবাসীদের কাছে একদম স্বাভাবিক।

ইউনেটিয়ায় সমুদ্র আছে, নদী আছে। সেখানকার জমিতে ফলে শস্যদানা। তবে পাহাড় পর্বত বেশি। আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম। পৃথিবীর আবাদযোগ্য জমির এক তৃতীয়াংশ মাত্র । তাতে অবশ্য তাদের কোনো সমস্যা হয় না। কারণ, সেখানে মানুষরূপী প্রাণীর সংখ্যা খুব খুবই কম। সর্বসাকুল্যে ত্রিশ কোটির কাছাকাছি। অন্যান্য প্রাণিও আছে। যেগুলো তাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। নদী আর সমুদ্রে আছে প্রচুর মাছ।

ইউনেটিয়া পৃথিবীর সমান একটা গ্রহ হলেও সেখানে আলাদা আলাদা কোনো রাস্ট্র নাই। পুরো গ্রহটি একটা কেন্দ্রীয় শাসন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। রাজতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি চালু সেখানে। রাজা তার শাসনের সুবিধার্থে পুরো গ্রহটিকে ১২ টি সমানভাগে ভাগ করে প্রত্যেকটা ভাগের শাসন ক্ষমতা একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ন্যস্ত করেছেন। পুরো গ্রহটি যেন এক শান্তির নীড়। হিংসা, দ্বেষ, মারামারি, মিথ্যা,লোভ এসব কি তা কেউ জানে না। ক্ষমতার জন্য কেউ লালায়িত নয় বিন্দুমাত্র।

ইউনেটিয়ার অধিবাসীরা নিজেদের খুবই বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে মনে করে। এই মহাজগতের কোথায় কোথায় প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তা তারা ইতোমধ্যে বের করে ফেলেছে। প্রায় সব জায়গায় তাদের স্পেসশীপ পাঠিয়ে ফেলেছে। পৃথিবী নামক গ্রহটির বাসিন্দাদের তারা মাঝারি বুদ্ধিমত্তার প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের হিংসা, লোভ, মিথ্যার ছড়াছড়ি দেখে নিজেরা হাসাহাসি করে। একটা সুন্দর বাসযোগ্য গ্রহ কিভাবে নিজেরাই ধ্বংস করে দিচ্ছে, এসব দেখে আফসোস করে। নির্বুদ্ধিতার চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে এখন পৃথিবীর মানুষেরা।

তবে এই মাঝারি বুদ্ধিমত্তার মানুষ নামের প্রাণিগুলোর মাঝে কয়েকজনের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকারবার তাদের রীতিমতো ঘাবড়ে দিয়েছে। এই অতি বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাংলাদেশ নামক একটা দেশে বাস করে। ইউনেটিয়ার রাজার কাছে যখন সেখানকার বিজ্ঞানীদলের প্রধান এই বুদ্ধিমান প্রাণিদের বুদ্ধিমত্তার কিছু নমুনা ও কর্মকাণ্ড বর্ণনা করেন, রাজা তো রীতিমতো বিস্মিত এবং শিহরিত। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হুকুম জারি করেন, যেভাবেই হোক এই মানুষগুলোকে এই গ্রহে নিয়ে আসতে হবে।

এতো বুদ্ধিমান প্রাণী পৃথিবীতে থাকা ইউনেটিয়ার অধিবাসীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাছাড়া, তারা গবেষণা করে দেখতেও চায়, এদের মস্তিষ্ক আসলে কি দিয়ে তৈরি।

বাংলাদেশের এই অতি বুদ্ধিমান মানুষগুলোর মাঝে তারা তিনজনকে প্রথমে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলো। কারণ, তাদের মনে হয়েছে, এরাই সেরা। এদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তা পৃথিবীর কেউ আপাতত ধারণ করে না।

রাজার কাছে ইউনেটিয়ার বিজ্ঞানীরা সেই তিনজনের বুদ্ধিমত্তার যেসব বর্ণনা করেন, সেগুলো এমনঃ

বুদ্ধিমানের তিনজনই বাংলাদেশের নাগরিক। তারা নির্দিষ্ট বেতনের সামান্য চাকরিজীবী। কিন্তু, তা হওয়া সত্ত্বেও একজন এই সামান্য বেতনের টাকায় বিশাল ভূখন্ড কিনে ফেলেছেন। তার সারা জীবনের বেতন ভাতা জড়ো করলেও তা দিয়ে তার একশত ভাগের একভাগও কেনা সম্ভব নয়। শুধু কি তাই? বাড়ি, গাড়িরও হিসাব নাই।

আরেকজন বিভিন্ন ব্যবসায়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার এক পুত্র এক লাখের ছাগল পনেরো লাখে কিনে হইচই ফেলে দিয়েছেন। টাকাকে সাধারণ কাগজের মতো মনে হয় তাদের কাছে।

আরেকজন নাকি কোন অফিসে গাড়ি চালিয়ে সামান্য বেতন পেতেন। অথচ , তিনি আর তার পুত্র মিলে গরীব দুখীকে দানধ্যান করে রীতিমতো মহামানব বনে গেছেন। তারও সম্পত্তির কোনো কুলকিনারা নাই।

রাজার মনে হয়েছে, এরা সাধারণ কোনো মানব না। কি কৌশলে তারা সামান্য টাকা দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললো, তা জানা খুব খুব প্রয়োজন। এটা ইউনেটিয়ার অধিবাসীদের জন্য নতুন কোনো সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিলেও দিতে পারে। তাদের এখানে নিয়ে আসলে, তারাও তাদের সম্পদ এভাবে শতগুণ বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

সমস্যা হলো, এই তিনজন মানুষের প্রতি এখন সেই দেশের সরকারও বিশেষ নজর রাখছে। মিডিয়াও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে। ড্রাইভার সাহেব নাকি কারাগারে বন্দী। হয়তো সেদেশের সরকারও জানতে চায়,এসবের রহস্য। তাই বেশি দেরি করা যাবে না। কিন্তু, কিভাবে এতো এতো নজর এড়িয়ে এদেরকে ইউনেটিয়ায় আনা যায়।

দায়িত্ব দেওয়া হলো ইউনেটিয়ার রাজার স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ( SIU বা সিউ ) এর ওপর। সিউ-এর স্পেশাল এজেন্ট নাভলন এবং নাভলনাকে পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলেন সিউ প্রধান নাভলন প্রিমিয়ার। প্রিমিয়ার প্রথমেই যা বললেন, তার মর্মার্থ হলো, বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী নাভলন আর নাভলনার প্রথম টার্গেট হন একরামুল সাহেব। একে একে রবি সাহা সহ মোট পাঁচজন।

তিন

পুরো দেশবাসীর দৃষ্টি, মিডিয়ার দৃষ্টি, পুলিশের নজরদারি চলে যায় একরামুল সাহেবদের দিকে। নাভলনরা এটাই চেয়েছিল। সবার মুখে মুখে এলিয়েনদের গল্প। কিভাবে একরাতের মধ্যে একটা মানুষ এগারো বারো ফুট লম্বা হয়ে যায়। এতো লম্বা একটা মানুষ কি খায়, কোন জামাকাপড় পরে, প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম কিভাবে সারে, কিভাবে ঘুমায় এসব নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়লো পুরো দেশ।

নাভলন আর নাভলনা দেখলো, তাদের তিন টার্গেটের কথা এখন সবাই একদম ভুলে গেছে। নজরদারি আর তাদের দিকে নেই। এই তো সুযোগ। শুধু কারাগারে থাকা ব্যক্তিটিকে তুলে আনাই একটু অসুবিধা। তাই, তাকে সবার শেষে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তারা ঠিক করলো, এক রাতের মধ্যেই তিনজনকে তাদের স্পেসশীপে তুলে নিবে। নাহলে, আবার সতর্ক হয়ে যাবে। নজরদারি বেড়ে যাবে।

প্রথম দুজনকে খুব সহজেই তাদের স্পেসশীপে তুলে ঘুম পাড়িয়ে রাখলো। কারাগার থেকে তৃতীয় জনকেও নিতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হলো না। কারণ, হিপনোটিক সাজেশন কারারক্ষীদের কিছু মুহূর্তের জন্য তাদের পক্ষে কাজ করাতে বাধ্য করেছিল। কারারক্ষীরা বাধা দেওয়া দূরে থাক, নিজেরাই তালা খুলে কাঙ্খিত অতি বুদ্ধিমান প্রাণিটিকে নাভলনদের হাতে তুলে দেয়।

পৃথিবীতে নাভলন আর নাভলনা’র মিশন আপাতত শেষ। স্পেসশিপে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় দুজনই। টানা ১০ দিনের মিশন। ক্লান্তির ছাপ তাদের চোখে মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অবশ্য আমরা পৃথিবীবাসী তাদের চোখ কোনটা আর মুখ কোনটা, তা ঠাওর করতে সময় লাগবে। ক্লান্তির ছাপ কি তাও বুঝতে পারবো না। নাভলন আর নাভলনা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। তাদের টার্গেট তিন অতি বুদ্ধিমান প্রাণীকে তারা স্পেসশিপের এক কোণায় তিনটা বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। ইউনেটিয়ায় না যাওয়া পর্যন্ত এই ঘুম ভাঙবে না। তাদের বুদ্ধি যেহেতু অতি উচ্চ মার্গের তাই বিশ্বাস নেই। ঘুম ভেঙে দেখা গেল স্পেসশিপটাও নিজেদের করে নিয়েছে।

এই তিন প্রাণী সম্পর্কে ডিটেইলস ব্রিফ করেছেন তাদেরকে নাভলন প্রিমিয়ার। এই তিনজন নাকি ম্যাজিক জানে। সামান্য আয়, অথচ প্রচুর সম্পদ গড়ে নিয়েছেন তারা । আশেপাশে যা থাকে,সব নিজের করে নিতে সিদ্ধহস্ত তিনজনই। তাই, এদের ঘুম পাড়িয়ে রাখাই ভালো। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে হাত পাও বেঁধে রেখেছে।

নাভলন আর নাভলনা দুজনই এখন ভারমুক্ত। জানে এই মিশন কমপ্লিট করে ইউনেটিয়ায় ফিরতে পারলেই জুটবে প্রমোশন। তারপরও তা নিয়ে বিন্দুমাত্র উচ্ছ্বসিত নয়। এসব নিয়ে ইউনেটিয়ার অধিবাসীদের কোনো চিন্তা, দুঃশ্চিন্তাও থাকে না। খুব কম চাহিদা নিয়ে থাকে প্রতিটি প্রাণী। তাই ত্রিশ কোটির প্রত্যেকেই খুব সুখী। শুধু যার যার দায়িত্ব পালন করতে পারলেই এরা খুশি। স্পেসশীপটাকে অটো পাইলট মোডে চালিয়ে নিজেরাও চলে যায়, যে যার বিছানায়। ঘুম দরকার। টানা ঘুম। এক ঘুমে পৌঁছে যাবে ইউনেটিয়ায়। প্রশান্তির ঘুম ঘুমোনোর অপেক্ষায় ছিল তারা দশ দশটা দিন ধরে ।

চার

একরামুল সাহেবের শারীরিক পরিবর্তনটা সবার আগে হয়েছিল। এরপরে আরও চারজন। ওরা সবাইকেই বলেছিল যেন না ঘাবড়ে যায়। এটা সাময়িক একটা পরিবর্তন। ওদের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলেই আবার আগের অবস্থা ফিরে পাবে। অথচ, এই উদ্দেশ্য হাসিলের বিষয়টা পাঁচজনের কেউই কাউকে বলে নি। ব্যাপারটা আশ্চর্য হলেও সত্য। কারণ ইউনেটিয়ার স্পেশাল এজেন্টদের হিপনোটিক সাজেশন একরামুল, রবিদের বা তাদের পরিবারের মুখে ওই একটা বিষয় নিয়ে তালা আটকে রেখেছিল ।

একরামুল সাহেব একদিন টিভির সামনে বসে সকালের নিউজ দেখছিলেন। দেখলেন, এক রাতের মধ্যে এদেশের তিন রত্ন গায়েব। কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টা বড়ই হতাশার ! এই তিন রত্ন নিয়ে দেশবাসী এতোদিন ভালোই মেতেছিল। এরা সামান্য আয় দিয়ে কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা কামালো, তা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছিল পত্রিকায়। টিভির ঝাল, মিস্টি, টক শোতে গরমের দিনেও স্যুট কোট পরে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জ্ঞানগর্ভ গবেষণা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু, যখনই তারা পাঁচজন লম্বা হতে শুরু করলেন, দেশবাসী, পত্রিকা, পুলিশ, টিভি চ্যানেল ওই তিন রত্নকে বেমালুম ভুলে গেল। সারা দিনরাত তখন শুধু একরামুল এখন কি খাচ্ছে। রবি বাবুর শার্ট কোন টেইলার্সে কত গজ কাপড় দিয়ে বানানো হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা আর আলোচনা !

সেই রাতেই একরামুল সাহেব বিছানায় শোয়ার পর পর তার শারীরিক পরিবর্তন টের পেতে শুরু করলেন। তার জন্য একটা বড় ঘর খালি করে মেঝেতে শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশে আগের নিয়মেই স্ত্রী আর সন্তান। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল। সারা শরীর কেমন যেন শিরশির করছে। ছোটো হতে শুরু করেছেন তিনি। আবার আগের শরীর ফিরে পেতে চলেছেন তিনি ! আনন্দে মুখ থেকে চিৎকার বের হয়ে আসতে চাইছিল। অনেক কষ্টে সামলে নিলেন। স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো লুঙ্গির ভিতর ঢুকে যাচ্ছে তার পা জোড়া। দুদিকে ছড়ানো হাত ছোটো হয়ে বুকের কাছে চলে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সব ঠিক আগের মতো হয়ে গেল।

পাশ ফিরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। আবছা আলোয় দেখলেন, লতিফা বেগম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। ছেলেটিও গভীর ঘুমে। ওদের আর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করলো না। সকাল হোক, এমনিতেই জানবে। আগামীকালের সকালটি হবে তাদের জন্য অতি প্রশান্তির সকাল। আবার ঘুমোনোর চেষ্টা করলেন। শরীর মনে প্রশান্তি চলে আসছে । এলিয়েনদের প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ঘুমিয়ে পড়লেন একরামুল।

In addition to creating news on this site, we collect news from various news sites and publish it with relevant sources. Therefore, if you have any objections or complaints about any news, you are requested to contact the authorities of the relevant news site. It is illegal to use news, photographs, audio and video from this site without permission.