
২০২৩ সালে যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নাথানিয়াহু দাবি করেছিলেন যে তার বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তনগুলো “স্থগিত” করা হয়েছে, তখন তার পরিকল্পনা পুনরায় বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গত দশ দিনে, নাথানিয়াহু গাজার অস্তিত্ব সংকট ছাড়িয়ে, শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে নতুন আইন পাস করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার পাস হওয়া নতুন আইন অনুযায়ী, নাথানিয়াহুর সমালোচকরা বলছেন, এই আইনটি সুপ্রিম কোর্টের সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এমনভাবে পরিবর্তন করবে যাতে রাজনীতিকরা তাদের পক্ষে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ পাবে। এই পরিবর্তনটি আগামী সংসদীয় মেয়াদে কার্যকর হবে। এই পদক্ষেপটি ইসরায়েলের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং এটি যেন একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা, যা বিচার বিভাগকে দুর্বল করে দিচ্ছে এমন সন্দেহ তৈরি করেছে।
বিচার ব্যবস্থায় রাজনীতির প্রভাব
নতুন আইনে বিচার বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির গঠন পরিবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে রাজনীতিকরা ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগে আরো বেশি প্রভাব রাখতে সক্ষম হবেন। আইনটি বিচার বিভাগের পেশাদারিত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারা।
আইনের ফলে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি এখন রাজনৈতিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যার ফলে এটি অনেকটাই পার্টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত হবে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষতি হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচার ব্যবস্থায় নাথানিয়াহুর ‘স্বার্থ’
নাথানিয়াহুর সমালোচকরা দাবি করছেন যে, তার এই বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রস্তাবগুলো আসলে তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আইন ব্যবস্থায় একে একে পরিবর্তন আনছেন, যা তার বর্তমান দুর্নীতির বিচার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
নাথানিয়াহু বর্তমানে তিনটি দুর্নীতির মামলায় বিচারের মুখোমুখি, যেখানে তার বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, বিচার ব্যবস্থায় এই পরিবর্তনগুলি তার বিরুদ্ধে চলমান বিচার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে সাহায্য করবে।
জনগণের প্রতিবাদ এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
নাথানিয়াহুর বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এসব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিরাট প্রতিবাদ প্রদর্শিত হয়, যা ইসরায়েলের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিবাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এখন, ইসরায়েলের জনগণ এবং বিরোধী দলগুলো নতুন করে এই আইনটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, একমাত্র কার্যকরী প্রতিকার হতে পারে নাথানিয়াহুর সরকারের পরবর্তী নির্বাচনে হার, যা ২০২৬ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে।