
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের একটি ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে, যা মুসলিম ওয়াকফ (দান) আইন সংশোধন করার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে। এই বিলটি মুসলিমদের জন্য ব্যবস্থাপনার বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির কথা বলছে এবং সরকারের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করছে ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে।
ওয়াকফ আইন মুসলিমদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যা ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে দান করা হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিলটির পক্ষে সরকার দাবি করেছে যে, এটি দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা রোধে সাহায্য করবে এবং বৈচিত্র্য প্রচার করবে। তবে, মুসলিমরা এই পদক্ষেপটি নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ তারা মনে করে যে, এটি ওয়াকফ সম্পত্তিগুলিকে – পুরানো মসজিদ, দোকান, মাজার, কবরস্থান এবং হাজার হাজার একর জমি – দখল, বিরোধ এবং ভাঙচুরের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
২৮৮ ভোটে বিল পাস
বুধবার, ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষে ওয়াকফ বিল নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়, যেখানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলি এই বিলকে অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক বলে দাবি করে। তবে, বিজেপি তার মিত্রদের সহায়তায় বিলটি ২৮৮ ভোটে পাস করতে সক্ষম হয়, বিপরীতে ২৩২ ভোটের বিরোধিতায়। বৃহস্পতিবার এই বিলটি সংসদের উচ্চকক্ষে আলোচনা হচ্ছে। যদি এটি পাস হয়, তবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে, তারপর এটি আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা এবং ঐতিহাসিক ঝুঁকি
ওয়াকফ বিলের সবচেয়ে বিতর্কিত পরিবর্তন হলো এর মালিকানা নীতিতে, যা সেসব মসজিদ, মাজার এবং কবরস্থানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে যেগুলোর অনেকেরই আইনগত দলিল নেই, কারণ সেগুলো অনেক দশক বা শতাব্দী আগে দান করা হয়েছিল। মুসলিমরা আশঙ্কা করছে যে, এই পরিবর্তনগুলি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের হাতে মুসলিম সম্পত্তির উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ এনে দিতে পারে।
বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া
ভারতের প্রধান বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এই বিলকে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং সম্পত্তির অধিকার হরণ করার অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই বিলটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে শাসন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।”
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বিলটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে অমুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, এবং তা ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে নয়। তিনি দাবি করেছেন যে, অমুসলিম সদস্যরা শুধুমাত্র তহবিল ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
অ্যাল ইসলামিক পার্সোনাল ল র বোর্ডের প্রতিবাদ
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল র বোর্ড (AIMPLB) এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এটি মুসলিম নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ এবং বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ।
মুসলিমদের উদ্বেগ
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়, যারা দেশের ১৪ শতাংশ জনগণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, তাদের মধ্যে এই বিল নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। তারা মনে করছে যে, সরকার মুসলিম সম্পত্তির উপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এবং এটি এমন একটি সময় হয়েছে যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বিলটি ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় ধরনের আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি নতুন প্রশ্ন তুলছে।