
হাঙ্গেরির সরকার ঘোষণা করেছে যে, তারা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (ICC) থেকে বেরিয়ে আসছে। এই পদক্ষেপটি প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, কয়েক ঘণ্টা পরেই যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু, যাকে ICC গ্রেফতারি পরোয়ানার মাধ্যমে অনুসন্ধান করছে, হাঙ্গেরিতে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন।
নভেম্বর মাসে, ICC-এর বিচারকরা বলেছিলেন যে, নেতানিয়াহু সম্ভবত “যুদ্ধাপরাধ” এবং “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” এর জন্য দায়ী, যা ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের সময় ঘটেছিল। নেতানিয়াহু ICC-এর সিদ্ধান্তকে “এন্টি-সেমিটিক” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
হাঙ্গেরি ICC-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যা ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত, এবং এটি হবে প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ, যা এই আদালত থেকে বেরিয়ে আসছে।
ওরবান সরকারের অভিযোগ
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য কর্মকর্তা গেরগেলি গুলিয়াস হাঙ্গেরির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা MTI-কে বলেন, ICC একটি “সম্মানজনক উদ্যোগ” হলেও, এটি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে রাজনৈতিক দেহে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দেওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা গ্রহণযোগ্য নয় এবং হাঙ্গেরি আর এই আদালতের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায় না।
ইসরায়েল ও হাঙ্গেরির সম্পর্ক
ইসরায়েল এ পদক্ষেপের জন্য হাঙ্গেরির প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বিদেশমন্ত্রী গিদিওন সআর এক পোস্টে বলেছেন, “যে ‘আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত’ নিজেকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে ক্ষুন্ন করতে চাচ্ছে, তা এখন আর নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়েছে।”
ICC-তে যোগদানকারী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের বেশ কিছু দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়া ICC-তে সদস্য নয় এবং তারা আদালতের এখতিয়ারকে মেনে নেয় না। ইসরায়েলও ICC-এর সদস্য নয়, তবে ২০২১ সালে ICC জানায় যে, তারা দখলকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম এবং গাজা অঞ্চলের উপর আদালতের এখতিয়ার প্রযোজ্য বলে মনে করে।
হাঙ্গেরির বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া
হাঙ্গেরি এখন জাতিসংঘের মহাসচিবকে একটি লিখিত নোটিফিকেশন পাঠাবে, যার পর এক বছর পর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, রোম চুক্তির ১২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী।
নেতানিয়াহু, যিনি এই পরোয়ানার পর থেকে হাঙ্গেরিতে প্রথমবার সফর করছেন, এ সফরে হাঙ্গেরির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টোফ স্যালাই-বোব্রোভনিক্জকি বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
এই পদক্ষেপটি বিশ্বের রাজনৈতিক ও আইনগত পরিসরে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং ইসরায়েল ও হাঙ্গেরির মধ্যে সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।