
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মারিন লে পেনকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তহবিল তছরুপের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা ইউরোপজুড়ে এবং বিশ্বব্যাপী চমক সৃষ্টি করেছে। তবে, লে পেনের মামলা শুধুমাত্র এক উদাহরণ, যা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে স্বচ্ছতার অভাব এবং অর্থনৈতিক তছরুপের বৃহত্তর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে।
লন্ডন থেকে ওয়াশিংটন: লে পেনের সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
বুদাপেস্ট থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত, লে পেনের রাজনৈতিক মিত্ররা এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন, বিশেষ করে যখন প্যারিসের আদালত তাকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক দপ্তর গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যা তাকে ২০২৭ সালের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দিতে পারে।
পার্লামেন্টারি সহকারীদের নিয়ম এবং তহবিল ব্যবহারের অনিয়ম
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৭২০ জন সদস্য তাদের সহকারীদের জন্য বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পায়, যা প্রশাসনিক কাজ, ভাষণ লেখা, এবং আইনি প্রস্তাবনা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে এই তহবিলটি আর্থিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতির জন্য অনুকূল।
একমাত্র দুইটি নিয়ম প্রযোজ্য: পারিবারিক সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে না এবং সহকারীদেরকে EU সম্পর্কিত কাজ করতে হবে, তবে এই নিয়মগুলির বাস্তবায়নে কোনো স্পষ্ট ব্যবস্থা নেই। লে পেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তার দলের অনেক সদস্যের সহকারীরা EU পার্লামেন্টের কাজের পাশাপাশি অন্য দায়িত্ব পালন করছিলেন, যার মধ্যে ছিল লে পেনের দেহরক্ষীও।
খুলাসা হওয়া কাতারগেট কেলেঙ্কারি এবং হুয়াওয়ে মামলা
২০২২ সালে কাতারগেট কেলেঙ্কারি সামনে আসে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন উচ্চপদস্থ সদস্য, সহকারী, লবিস্ট এবং তাদের আত্মীয়রা কাতারি ও মরোক্কোর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে জড়িত। এছাড়াও, চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় সদস্যদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে।
পার্লামেন্ট কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে?
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তার নিজস্ব সদস্যদের তহবিলের তছরুপ তদন্ত করতে প্রধানত জাতীয় বিচারব্যবস্থা এবং ইউরোপীয় সংস্থা OLAF-এর উপর নির্ভর করে। OLAF শুধু তদন্ত করতে পারে এবং ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে, তবে এটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। তবে, সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিচারব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায়ই বিরল।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের শুদ্ধতার উদ্যোগে বাধা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছুটা স্বচ্ছতা নীতিমালা কঠোর করেছে, তবে কাতার কেলেঙ্কারির পরও প্রাথমিকভাবে তা পর্যাপ্ত ছিল না। একটি নতুন ইউরোপীয় নৈতিক দপ্তরের সূচনা অনেক দেরি হয়েছে এবং বড় রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার কারণে এটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
এটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জন্য একটি বড় সংকট, যেহেতু এটি অনিয়ম এবং তছরুপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অক্ষম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।