
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইস্টার উপলক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে এক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও, ইউক্রেন জানিয়েছে যে রুশ বাহিনী এখনও হামলা অব্যাহত রেখেছে। যুদ্ধ যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনাও স্থবির হয়ে পড়েছে, তখন পুতিনের এই ঘোষণা আসে।
পুতিন বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা (মস্কো সময়) থেকে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত (রবিবার ইটি সময় বিকাল ৫টা) “সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম” বন্ধ থাকবে।
“আমরা আশা করি ইউক্রেনও আমাদের মতো আচরণ করবে,” তিনি বলেন। পুতিনের মতে, এই বিরতি কিয়েভের আন্তরিকতা যাচাই করতে সাহায্য করবে- নিরবতার জবাবে নিরবতা
তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন জানায়, রুশ বাহিনী এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
“সর্বাধিনায়ক জানিয়েছেন, ফ্রন্ট লাইনের কয়েকটি স্থানে রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং গোলাবর্ষণ চলছে,” শনিবার রাতে এক ভাষণে বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি জানান, পুতিন এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেননি।রাশিয়া যদি সত্যিই নিরবতা চায়, তাহলে আমরা প্রতিফলন করব—নিরবতার জবাবে নিরবতা, হামলার জবাবে প্রতিরক্ষা,” তিনি বলেন।
“৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শুধু শিরোনামের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু শান্তি আনার জন্য নয়। ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি হলে শান্তির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে,” যোগ করেন জেলেনস্কি।
পুতিনের এই হঠাৎ ঘোষণা এমন সময় আসে যখন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে কুরস্ক অঞ্চলের শেষ ঘাঁটি থেকে হটিয়ে দিয়েছে। এর আগে এই অঞ্চলে ইউক্রেন একটি চমকপ্রদ অভিযান পরিচালনা করেছিল।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, “দুঃখজনকভাবে, পুতিনের ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুব কম। রাশিয়া চাইলে এখনই ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারে, এই প্রস্তাব মার্চ থেকেই টেবিলে রয়েছে।”
পুতিনের ঘোষণা পর রাতেই মস্কোর খ্রিস্ট দ্য সেভিয়ার ক্যাথেড্রালে একটি অরথোডক্স ইস্টার সেবায় অংশ নেন তিনি। সেখানে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল সেবাটি পরিচালনা করেন, যিনি যুদ্ধের একজন প্রকাশ্য সমর্থক।
তবে, ইউক্রেন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি রাশিয়ার কুরস্ক এবং বেলগোরোদ অঞ্চলে কার্যকর হয়নি।
“রুশ ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে, কিছু অঞ্চলে অবস্থা কিছুটা শান্ত হলেও হামলা বন্ধ হয়নি,” বলেন জেলেনস্কি।
খের
“গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে এবং বেসামরিক মানুষ আবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে, রাশিয়ার জন্য কিছুই পবিত্র নয়,” বলেন খেরসনের আঞ্চলিক প্রশাসক ওলেক্সান্দার প্রোকুদিন।
এদিকে, শনিবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম বন্দি বিনিময় হয়েছে।
জেলেনস্কির মতে, ২৭৭ জন ইউক্রেনীয় সৈনিক ফিরে এসেছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ২৪৬ জন ইউক্রেনীয় বন্দির বিনিময়ে সমান সংখ্যক রুশ সৈনিককে ফিরিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও, “সদিচ্ছার” নিদর্শন হিসেবে রাশিয়া ৩১ জন আহত ইউক্রেনীয়কে ১৫ জন রুশ আহত সেনার বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছে।
শান্তির সম্ভাবনা কি টিকে আছে?
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন শান্তি উদ্যোগও বর্তমানে থমকে রয়েছে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করেন, যদি কোনো অগ্রগতি না হয়, তবে “কয়েক দিনের মধ্যেই” যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে পারে।