
জনপ্রিয় বৈশ্বিক গণমাধ্যম CBS এর প্রতিবেদনে বলা হয়- যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান শনিবার ইতালির রোমে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় অংশ নেয়, যেখানে ইরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত এবং বিলিয়নিয়ার স্টিভ উইটকফ রোমের কামিলুচিয়া অঞ্চলে অবস্থিত ওমান দূতাবাসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে বৈঠক করেন। এই আলোচনার মধ্যস্থতা করেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা CBS নিউজকে বলেন, “আজ রোমে আমাদের দ্বিতীয় দফার আলোচনায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সরাসরি ও পরোক্ষ আলোচনা হয় এবং এতে খুব ভালো অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আগামী সপ্তাহে আবারও বৈঠক করবো বলে সম্মত হয়েছি এবং ওমান ও ইতালিকে আমাদের অংশীদার হিসেবে ধন্যবাদ জানাই।”
বৈঠকের পরে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি জানান, আগামী ২৬ এপ্রিল ওমানে তৃতীয় দফার আলোচনা হবে, তবে তার আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠক হবে।
আরাকচি বলেন, “আলোচনা একটি গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আমি বলতে পারি, এটি এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করি কারিগরি আলোচনার পর আমরা আরও ভালো অবস্থানে থাকব।”
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না এবং “সব ধরনের বিকল্প উন্মুক্ত” রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এই আলোচনা চিরকাল চলতে পারে না”।
গত সপ্তাহে ওমানের রাজধানী মাসকটে উইটকফ ও আরাকচির মধ্যে প্রথম দফার সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ওমান ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে।
ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় X-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে আলোচনা চালিয়ে যাবে, যাতে ইরান “সম্পূর্ণরূপে পারমাণবিক অস্ত্র ও নিষেধাজ্ঞামুক্ত থেকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নে সক্ষম হয়।”
ঐতিহাসিক পটভূমি ও ঝুঁকি
এই আলোচনা নিজেই এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামিক বিপ্লব এবং মার্কিন দূতাবাস জিম্মি সংকটের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন, যা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল।
বর্তমানে আশঙ্কা রয়েছে যে, চুক্তি না হলে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালাতে পারে, অথবা ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে।
কূটনৈতিক অগ্রগতি
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, “কূটনৈতিক সমাধান ধৈর্য ধরে, দিনকে দিন, সংলাপ ও পারস্পরিক সম্মানের মাধ্যমে গড়ে ওঠে।” তিনি জানান, ইটালি কারিগরি পর্যায়েও এই আলোচনার আয়োজনে আগ্রহী।
IAEA (আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা)-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি তাজানির সঙ্গে শনিবার সাক্ষাৎ করেন। নতুন কোনো চুক্তি হলে IAEA তার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা (যাতে ৭০ জনের বেশি নিহত হয়), এসব ঘটনায় পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের আলোচনা কূটনৈতিক সমাধানের জন্য একটি সম্ভাবনাময় পথ হিসেবে দেখা হচ্ছে।