
বহুদিনের অপেক্ষা ও গুঞ্জনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বুধবার ঘোষণা করতে যাচ্ছেন একাধিক “পারস্পরিক” বা ‘রেসিপ্রোকাল’ শুল্ক, যা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ও প্রতিদ্বন্দ্বী— উভয় দেশের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
ট্রাম্প এই দিনটিকে ঘোষণা করেছেন “লিবারেশ৮ন ডে” বা ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে। তার দাবি অনুযায়ী, এই শুল্ক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাতকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং বিদেশি দেশগুলোর “অন্যায্য বাণিজ্যিক নীতির” বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপটি মার্কিন অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং বহু বছরের পুরনো মৈত্রী বন্ধনে ফাটল ধরাতে পারে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, “২০২৫ সালের ২ এপ্রিল আধুনিক মার্কিন ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে।” তিনি আরও জানান, এই শুল্ক কার্যকর হবে তাৎক্ষণিকভাবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় রয়েছে:
গাড়ি আমদানির ওপর ২৫% শুল্ক
চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর কর
স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর বর্ধিত কর
ভেনেজুয়েলা থেকে তেল আমদানিতে শুল্ক
ওষুধ, কাঠ, কপার ও কম্পিউটার চিপসের ওপর আলাদা কর
অর্থনীতির ঝুঁকি
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো দাবি করেছেন, এই শুল্ক থেকে বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলার আয় হবে— যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ কর আদায় হবে। তবে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, সার্বিক ২০% শুল্ক সাধারণ আমেরিকান পরিবারকে বছরে অতিরিক্ত $৩,৪০০ থেকে $৪,২০০ পর্যন্ত খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে প্রায় ১ শতাংশ, এবং পোশাক, তেল, গাড়ি, খাদ্যসামগ্রী এমনকি ইন্স্যুরেন্সের খরচও বেড়ে যাবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিস্পর্ধা
ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার বলেছেন, এই শুল্ক ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ধনীদের জন্য আয়কর ছাড়ের খরচ মেটানো। এমনকি রিপাবলিকানরাও স্বীকার করছেন যে এতে স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক ঝাঁকুনি আসতে পারে।
ইতোমধ্যেই কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর কর বসিয়েছে, যার মধ্যে আছে বার্বন হুইস্কি— আর ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দিয়েছেন ইউরোপীয় অ্যালকোহলের ওপর ২০০% কর বসানোর।
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, “এই সংঘাত ইউরোপ শুরু করেনি। কিন্তু আমরা প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।”