
জাজিরায় সরকারি নয়নজুলী অবৈধভাবে দখলের হিড়িক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শরীয়তপুরের জাজিরায় সরকারি নয়নজুলি খাল দখলের হিড়িক পড়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে সরকারি খাল অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের নজরদারি নেই সেজন্যই স্হানীয় কিছু প্রভাবশালীরা সরকারি নয়নজুলী খালের জায়গায় ইচ্ছেমতো স্থাপনা তৈরি করছে।
জাজিরা উপজেলার খাদ্য গোডাউন মোড় থেকে জাজিরা পুরাতন লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত উত্তর বাইকশা গ্রামের খালটির মধ্যে একাধিক বসতি বাড়ির রাস্তা দোকান পাট বাজার নির্মাণ হয়েছে। সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে জানা যায় কোন একসময় নয়নজুলী দিয়ে বিভিন্ন নৌযান কারগো ও টলারের মাধ্যমে সরকারি খাদ্য গুদামে আনানেওয়া হতো সরকারি মালামাল। প্রায়সময় জেলে নৌকা ও টলারের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত করা হয়েছি নয়নজুলী খালটি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রামের মাতবার মোঃ মোতালেব মাদবর (৬৫) জানান তৎকালীন ১৯৭৫ সালে জাজিরা উপজেলা খাদ্য গোডাউনের জন্য ৩৩ নং উত্তর বাইকশা মৌজার ১ নং খতিয়ান ৬০৫ নং দাগে জমি পরিমাণ ১.০৫ জমিনের শ্রেণী নয়নজুলী খাল সরকারের নামে রেকর্ড করা হয়।
তিনি আরও জানান জাজিরা পৌর এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়ির ময়লা আবর্জনা ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশন করার মতো কোন খাল কাঁটা নেই। বৃষ্টি হলে উপজেলা চত্বর থেকে শুরু করে পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামের পানি জমে থাকে। ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ করতে লাগামহীন পরিশ্রম করতে হয়। পৌরবাসীদের দাবি যদি নয়নজুলী খালটি খননের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে আমাদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না। পৌর-সভার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় প্রচুর পরিমাণে ময়লা আবর্জনা ও নর্দমার বাগারে পরিনত হয়েছে। পরিবেশ দূষিত আর দূষিত মশামাছি তৈরিসহ দুর্গন্ধ সৃষ্টি বাজারের চারিপাশের অবস্থা।
প্রশাসনের কাছে অনুরোধ নয়নজুলী খালটি পুনরায় খনন করে স্বচ্ছ পানির যাতায়াত ও পৌর এলাকার ড্রেনের পানি নদীতে নামার ব্যবস্থা করে দিলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।
উত্তর বাইকশা গ্রামের বাসিন্দা ও গোডাউন মোড় বাজার ব্যবসাহী মোহাম্মদ বাচ্চু সরদার বলেন ১৯৭৫ সালের উপজেলা সার্ভে সেটেলমেন্ট জরিপ অনুযায়ী আর-এস ও এস-এ রেকর্ড অনুযায়ী নয়নজুলী ভূমিটি বিভিন্ন মালিকের নামে হয়েছিল। পরবর্তীকালীন সময় সরকারি খাদ্য গুদমের স্বার্থে উত্তর বাইকশা মৌজার ১ একর ৫ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সরকারি খাস মহল শ্রেণী নয়নজুলী রূপান্তরিত করে সরকারি খতিয়ানে যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে নয়নজুলী খালটি, কিছু প্রভাবশালীরা মিলে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে জমি দখল করে নিয়েছে।
অন্যদিকে জাজিরা পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ ইদ্রিস মাদবর ও জাজিরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোস্তাফিজ রহমান মিলে গোডাউন মোড়ের বাজার বড় করার জন্য ২০ শতাংশ জমি বালু ভরাট করে রেখেছেন।
নয়নজুলীর কিছু অংশ দখল করে রাস্তা নির্মাণ করা একজন আব্দুল মান্নান বেপারী দাবি করে জানান কোন একসময় নয়নজুলী ছিলনা জমির মালিক ছিলাম আমরা অন্যদিকে সরকারি খাদ্য গুদামেন মালামাল আনবার জন্য ঐসময়ে নয়নজুলী খাল খনন করা হয়। খালের পাশে আমার বাড়ি নির্মাণ করেছি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে ফ্লাট ভাড়া দেওয়ার জন্য। নয়নজুলীর উপর দিয়ে একটি সড়ক প্রয়োজন সেজন্য বাড়ির সামনে রাস্তা নির্মাণ করেছি।
জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশন (ভূমি) সাদিয়া বিনতে সোলাইমান বলেন গোডাউন মোড়ের নয়নজুলী খাল দখলের বিষয় আমরা অবগত হয়েছি অবৈধভাবে খালের উপর একাধিক রাস্তা নির্মাণ দোকানপার্ট ও বাজার নির্মাণ হয়েছে। জাজিরা পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।