
বাংলাদেশ সরকার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর বাংলাদেশে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। নারীর শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যাপারটি শুরু করে ইসলামী উগ্রপন্থীরা। কিছুদিন আগে একটি শহরে ইসলামী মৌলবাদীরা ঘোষণা দেয়, নারীরা আর ফুটবল খেলতে পারবে না। অন্য একটি শহরে তারা এমন একজনকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে বাধ্য করেছে, যে ব্যক্তি জনসমক্ষে হিজাব না পরার জন্য এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করেন।
তবে প্রতিবেদনটিকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও একপক্ষীয় ধারণা তৈরি করছে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন তার গণতন্ত্র পুনর্গঠন এবং দেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা করছে, তখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকা ইসলামী চরমপন্থার ধারাটি ফুটে উঠছে। এক সাক্ষাৎকারে ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল ও সংগঠন যার মধ্যে কয়েকটি আগে নিষিদ্ধ ছিল- এসব সংগঠনের নেতারা স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে আরও মৌলবাদের দিকে ঠেলে দেওয়ার কাজ করছেন। তারা এমন এক ধরনের পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছেন, যা দেশের বাইরে খুব কমই লক্ষ্য করা দেখা গেছে।ইসলামপন্থী এ নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে এমন একটি ‘ইসলামি সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হোক, যে সরকার ইসলাম ধর্মকে অবমাননাকারীদের শাস্তি দেবে এবং ‘শালীনতা’ প্রতিষ্ঠা করবে। এই অস্পষ্ট ধারণাগুলো অন্যান্য জায়গায় রক্ষণশীল বা ধর্মতান্ত্রিক শাসনের পথ তৈরি করেছে। নতুন সংবিধান তৈরিতে কাজ করছেন এমন নেতারাও স্বীকার করেছেন, এই খসড়ায় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়টি বাদ দেওয়া হবে। সেখানে বহুত্ববাদ প্রতিস্থাপন করা হবে। দেশকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব নারী শিক্ষার্থী পথে নেমেছিলেন, তাদের জন্য মৌলবাদীদের এই বিশেষ উত্থান বিশেষভাবে বেদনাদায়ক। তারা তার একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বৈচিত্রপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও উন্মুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু তাদের এখন ধর্মীয় জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। তাদেরকে লড়াই করতে হচ্ছে এমন এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, যারা নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু ও ইসলামের ছোট ছোট সম্প্রদায়ের অনুসারীদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ২৯ বছর বয়সী শেখ তাসনিম আফরোজ এমি বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলাম। আমরা রাস্তায় আমাদের ভাইদের রক্ষা করেছি। এখন পাঁচ-ছয় মাস পর দেখছি, পুরো ব্যাপারটা উল্টে গেল।’ সমালোচকরা বলছেন, ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অধ্যাপক ইউনূস অপেক্ষাকৃত নমনীয়, গণতান্ত্রিক সংস্কারের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া ও সংঘাত‑বিমুখ হওয়ার কারণে স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারেননি। ফলে ইসলামী চরমপন্থীরা আরও বেশি জনসাধারণের স্থান দখল করে নিয়েছে।