
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী শহর সুমিতে গত রোববার ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩৪ জন নিহত এবং আরও ১১৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের দাবি, এই হামলায় রাশিয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্লাস্টার মিউনিশন ব্যবহার করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রাশিয়া এখনও এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে এটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে ইউক্রেনে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার পরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “শুধু নির্মম অপরাধীরাই সাধারণ মানুষের প্রাণ নিতে পারে।” তিনি জানান, হামলার সময় অনেকে গির্জায় যাওয়ার পথে ছিলেন, কারণ এটি ছিল খ্রিস্টানদের ‘পাম সানডে’। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে আহ্বান জানান।
ঘটনার সময়কার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কের মাঝে ছড়িয়ে আছে নিহতদের মৃতদেহ, পাশে পোড়া বাস ও ভস্মীভূত গাড়ি।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ও পিএইচডি শিক্ষার্থী বলেন, “রাশিয়ানরা সবসময় বলে তারা খ্রিস্টান, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। কিন্তু আজ যা হয়েছে তা সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু না।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, “এই হামলা দেখায় রাশিয়ার কথিত শান্তির আগ্রহ আসলে কতটা মিথ্যা।” চ্যান্সেলর-ইন-ওয়েটিং ফ্রিডরিখ মার্জ এই হামলাকে সরাসরি “পরিকল্পিত যুদ্ধাপরাধ” বলে অভিহিত করেন।
এই ঘটনার ঠিক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত ক্রেমলিন ও কিয়েভের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে আলোচনা করেন। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাটি ভয়াবহ। আমাকে বলা হয়েছে এটি একটি ভুল ছিল। কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
জেলেনস্কি সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে ইউক্রেনে এসে বাস্তব পরিস্থিতি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “অনুগ্রহ করে আসুন, সাধারণ মানুষ, সৈন্য, হাসপাতাল, গির্জা, শিশুদের দেখুন—যারা ধ্বংস হয়েছে বা নিহত হয়েছে।”
ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণমন্ত্রী জানান, সুমি শহরের কেন্দ্রস্থলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে যখন লোকজন রাস্তায় কিংবা গাড়িতে ছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক জানান, ক্ষেপণাস্ত্রে ক্লাস্টার বোমা ছিল।
এদিকে হামলার পর তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন সুমির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরতেম কোবজার।
এ ছাড়া একই দিনে ওডেসা শহরে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় পাঁচজন আহত হন এবং একটি চিকিৎসা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার ইউক্রেনীয় বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। রাশিয়া যদিও বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার করে, কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরু করেছে।
উৎস: রয়টার্স