
যুক্তরাজ্যের সংবেদনশীল বাণিজ্য আলোচনার নথিপত্রে নিরাপত্তা জোরদার করছে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে প্রকাশ,প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মার্কিন নজরদারি থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা সংবেদনশীল বাণিজ্য নথিপত্রের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করছেন।
“বিশেষ সম্পর্ক”-এ টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিয়ে গার্ডিয়ানকে ব্রিটিশ সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকারি কর্মচারীরা এখন নতুন নির্দেশনা অনুসারে কিছু বাণিজ্য আলোচনার নথিপত্রকে উচ্চতর শ্রেণিবিন্যাসে (যেমন “সিক্রেট” বা “টপ সিক্রেট”) অন্তর্ভুক্ত করছেন, যাতে সেগুলো আমেরিকার হাতে না পড়ে।
হোয়াইট হাউসের অনির্দেশ্যযোগ্য ও দ্রুত পরিবর্তনশীল শুল্ক নীতির ফলে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের ওপর ১০% এবং গাড়ি ও স্টিল রপ্তানিতে ২৫% ট্যারিফ আরোপের জবাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে, স্টারমার বরং ডিজিটাল কর ও কৃষিতে কিছু ছাড় দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মঙ্গলবার বলেছেন, একটি পারস্পরিক লাভজনক মার্কিন-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি ‘হাতে পৌঁছানোর মতো কাছে’। তিনি বলেন, “এই সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” এবং “কিয়ার স্টারমারের সরকারের সঙ্গে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি চুক্তি সম্পন্ন করতে।”
ভ্যান্স আরও বলেন, “আমেরিকার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সাংস্কৃতিক মিল অনেক গভীর। আমেরিকা মূলত একটি অ্যাংলো দেশ। আমি মনে করি, উভয় দেশের স্বার্থে একটি চমৎকার চুক্তি হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে যুক্তরাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য নথিগুলো সাধারণত “Official – sensitive (UK eyes only)” হিসেবে চিহ্নিত থাকত এবং সেগুলো অভ্যন্তরীণ ইমেইলে শেয়ার করা যেত। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলাকালেও এই শ্রেণিবিন্যাস অপরিবর্তিত ছিল, যদিও তখন পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা কম ছিল।
বর্তমানে, নথিপত্র ও যোগাযোগের অনেক বড় অংশে অতিরিক্ত নির্দেশনা যুক্ত হচ্ছে যাতে মার্কিন নজরদারি এড়ানো যায়। এখন কিছু নথিকে “সিক্রেট” এবং “টপ সিক্রেট” হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হচ্ছে, যার ফলে এগুলো ডিজিটালি কীভাবে ভাগ করা যাবে, সে সম্পর্কেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ব্যবসা পরিচালনাকারী বড় কোম্পানিগুলোকেও, বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলোকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডাউনিং স্ট্রিটের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্য বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এক অবিচ্ছেদ্য মিত্র এবং একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যা আমাদের বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।”
এই ঘটনাগুলো বড় এক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ কি টিকে থাকবে, নাকি রাশিয়া নিয়ে ভিন্নমত ও ন্যাটো ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে গভীর সমালোচনার কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? বাণিজ্যে গাড়ি শিল্প ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে চাপ ক্রমাগত বাড়ছে