
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর একটি নতুন নির্বাহী আদেশকে চরমভাবে সমালোচনা করেছেন একজন ফেডারেল বিচারক। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির একটি আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক লরেন এল. আলিখান এক রায়ে বলেন, এটি “ক্ষমতার ভয়ঙ্কর অপব্যবহার” এবং “একটি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ”।
আদালত Susman Godfrey নামের একটি প্রখ্যাত আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে Fox News-এর বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি সংক্রান্ত মিথ্যা প্রচারের মামলা করে $৭৮৭ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ আদায় করে।
ট্রাম্পের ‘প্রতিশোধমূলক’ পদক্ষেপ
ট্রাম্পের আদেশে প্রতিষ্ঠানটির ফেডারেল কন্ট্রাক্ট বাতিল, সরকারি ভবনে প্রবেশ নিষেধ, এবং নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স প্রত্যাহার করার নির্দেশ ছিল। বিচারক আলিখান বলেন, “সংবিধান রচয়িতারা এই ধরনের সিদ্ধান্তকে গুরুতরভাবে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখতেন।”
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি
Susman Godfrey-এর পক্ষে আইনি যুক্তি তুলে ধরে সাবেক সলিসিটার জেনারেল ডোনাল্ড ভারিলি জুনিয়র আদালতে বলেন, “আমরা দ্রুত একটি আইনগত বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি। কেবল আদালতই এই অনিয়ম থামাতে পারে।”
নির্বাহী ক্ষমতার বিপজ্জনক ব্যবহার
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই একের পর এক নির্বাহী আদেশ ও মেমোরেন্ডামের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের শাস্তি দিতে বিচার বিভাগের শক্তিকে ব্যবহার করছেন।
এই পদক্ষেপগুলো ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর গড়ে ওঠা নির্বাহী হস্তক্ষেপবিরোধী ঐতিহ্যকে লঙ্ঘন করছে। জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির আইনি বিশেষজ্ঞ ইলিয়া সোমিন বলেন, “এই পদক্ষেপগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ধ্বংস না করলেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
টার্গেটের তালিকায় সাবেক কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা
ট্রাম্প শুধু Susman Godfrey নয়, আরও বেশ কয়েকটি আইন প্রতিষ্ঠান এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদেরও নিশানায় নিয়েছেন। তিনি ক্রিস ক্রেবস, সাবেক সাইবার নিরাপত্তা প্রধান, এবং মাইলস টেলর, ট্রাম্পবিরোধী এক গোপন লেখক, দুজনের বিরুদ্ধেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া, ট্রাম্প টেসলা ডিলারশিপে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিকে নির্দেশ দেন, যাদের অনেকেই এলন মাস্কের মালিকানাধীন। বন্ডি বলেন, “এরা সবাই ২০ বছরের কারাদণ্ডের মুখে পড়বে।” ট্রাম্প তখন বলেন, “চমৎকার।”
‘বিপজ্জনক নজির’ তৈরি করছেন ট্রাম্প
আইনি নীতি ও নৈতিকতা বিশ্লেষক স্টিফেন গিলারস বলেন, ট্রাম্পের আদেশে তিনি একই সঙ্গে প্রসিকিউটর, বিচারপতি ও আইনপ্রণেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামোর পরিপন্থী।
বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ
ট্রাম্প শিবিরের দাবি, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বিচার বিভাগকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তবে, তদন্তে এর কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলেনি।