
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার প্রাক্কালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বৃহস্পতিবার সেই বার্তা নিয়ে মস্কো পৌঁছান ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।
খামেনির পাঠানো চিঠিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, পারমাণবিক কর্মসূচি ও রাশিয়া-ইরান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
আরাকচি বলেন, “চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সবসময় পারমাণবিক ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ আলোচনা হয়। এখন রাশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়।”
এই সফর এমন এক সময় হচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— যদি পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা না হয়, তবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
গত সপ্তাহে ওমানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা আলোচনাকে উভয় পক্ষই “ইতিবাচক ও গঠনমূলক” বলে অভিহিত করেছে। দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে আসছে শনিবার রোমে। তবে আরাকচি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।”
রাশিয়া ও ইরানের সম্পর্ক
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী, যেটি ট্রাম্প ২০১৮ সালে প্রথম মেয়াদে বাতিল করেছিলেন।
২০২৫ সালের শুরুতে রাশিয়া ও ইরান ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে, যদিও তাতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোনো ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে উভয় দেশ একসঙ্গে যুদ্ধ করলেও বাশার আল-আসাদের পতনের পর ভূরাজনৈতিক সমীকরণ কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু প্রতিযোগিতার ঝুঁকি
পশ্চিমা দেশগুলো দাবি করছে, ইরান বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন ছাড়িয়ে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। তবে তেহরান সবসময় বলে আসছে, তারা পরমাণু অস্ত্র চায় না এবং তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকার আছে।
ক্রেমলিনের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক অভিযান “অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য”। তবে রাশিয়া এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি যে, তারা ভবিষ্যৎ কোনো চুক্তির অংশ হিসেবে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে আগ্রহী কিনা।