
পাকিস্তানি সেনারা শনিবার ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অবস্থানে গুলি চালিয়েছে, যা বিতর্কিত কাশ্মিরে দু’দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ঘটল। ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, এই হামলা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর (লাইন অফ কন্ট্রোল) পাকিস্তানি পোস্ট থেকে শুরু হয়।
গত সপ্তাহে পর্যটকদের উপর আক্রমণের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে। ভারত এই হামলাকে “সন্ত্রাসী আক্রমণ” বলে আখ্যায়িত করে এবং পাকিস্তানকে এর সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছে। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কাশ্মিরের পাহালগামের কাছে এই আক্রমণে ২৬ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ভারতীয় পর্যটক। এই হামলার দায়িত্ব একটি অজ্ঞাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী “কাশ্মির রেজিস্ট্যান্স” দাবি করেছে।
এটি কাশ্মিরে বছরের পর বছর সশস্ত্র আক্রমণের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ একটি হামলা ছিল। ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে, এবং দুই দেশ কাশ্মির নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি যুদ্ধ করেছে। কাশ্মির অঞ্চলটি দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত, তবে উভয়েই এটি নিজেদের দাবি করে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, “পাকিস্তানি সেনারা একাধিক পোস্ট থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখার ওপর ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনারা যথোপযুক্তভাবে ছোট অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করেছে,” তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, পাকিস্তান সরকার এর আগেও উভয় পক্ষের সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে, এবং এসব ঘটনা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়।
উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা
কাশ্মিরে আক্রমণের পর ভারত গুরুত্বপূর্ণ একটি পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে এবং একমাত্র কার্যকর স্থল সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানীদের ভিসা বন্ধ করেছে। এর পরেই পাকিস্তান ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করেছে, ভারতীয় বিমান চলাচল বন্ধ করেছে এবং বাণিজ্য স্থগিত করেছে। শুক্রবার থেকে উভয় দেশের নাগরিকরা পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ শনিবার বলেছেন, ভারত যদি পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে পাকিস্তান “পূর্ণ শক্তি” দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান পর্যটক আক্রমণের একটি “নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে” অংশ নিতে প্রস্তুত।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা ভারতকে পানির প্রবাহ বাড়ানোর অভিযোগে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।
ক্যাসমিরে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণ এবং গৃহবধূদের ওপর অভিযান
মঙ্গলবারের আক্রমণের পর ভারতীয় বাহিনী কাশ্মির উপত্যকায় শক্তিশালী অভিযান শুরু করেছে। ভারতীয় পুলিশ অন্তত ১৫০০ জনকে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এবং তারা কয়েকটি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়া, ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরে বাড়িঘর ধ্বংস করার একটি সাধারণ “অ্যান্টি-মিলিটেন্সি” কৌশল হিসেবে সন্ত্রাসী সন্দেহে কিছু পরিবারের বাড়ি ধ্বংস করেছে। এই ঘটনা ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয় পাচ্ছেন এবং সরকারের প্রতিশোধের আশঙ্কা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এটি তাদের নিজেদের বিষয় এবং তারা এটি নিজেদের মধ্যে সমাধান করবে।”