
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চার মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফিরেছেন। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার জন্য চাপ তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার ফেরা এমন একটি সময়ে ঘটলো, যখন বাংলাদেশ একটি সংকটময় রাজনৈতিক পর্যায় অতিক্রম করছে। গত বছর আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে।
খালেদা জিয়ার দেশে ফিরে আসা বিএনপির জন্য একটি শক্তিশালী প্রতীকী বার্তা বহন করছে, কারণ তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে রয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,“এটি আমাদের ও জাতির জন্য একটি আনন্দের মুহূর্ত। গণতন্ত্রের জন্য এই সংকটময় সময়ে তাঁর উপস্থিতি দেশবাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথকে আরও মসৃণ করবে।”
ঢাকার প্রধান বিমানবন্দর এবং সেখান থেকে তাঁর বাসভবনের পথে হাজার হাজার সমর্থক তাঁকে স্বাগত জানাতে ভিড় করেন। বেশ কয়েক বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা এই বিএনপি নেত্রীকে হুইলচেয়ারে দেখা যায়। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হাত তুলে শুভেচ্ছা গ্রহণ করতে করতে হাসছিলেন।
তিনবার প্রধানমন্ত্রী থাকা খালেদা জিয়া – যার মধ্যে দুইবার পূর্ণ মেয়াদ এবং একবার কয়েক মাসের জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন – ২০১৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত হয়ে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই অভিযোগগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে আনা হয়েছিল এবং বিএনপির মতে, তা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করে ১০ বছরের সাজা বাতিল করে। এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরেও আরেকটি আলোচিত মামলায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।
নির্বাচনের তারিখ
যদিও খালেদা জিয়া আগে থেকেই কারামুক্ত ছিলেন, তবে তাঁর এই দেশে ফিরে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ স্পষ্টভাবে ঘোষণার চাপ আরও বাড়াবে। এই সরকার বর্তমানে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্নের ওপর নির্ভর করে আগামী ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
খালেদা জিয়া সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, যিনি ১৯৮১ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দিককার নারী বিশ্বনেতাদের একজন। তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।