ঢাকামঙ্গলবার , ১৩ মে ২০২৫
  1. Global News
  2. অপরাধ
  3. অভিযোগ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন-বিচার
  6. আটক
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আবহাওয়া
  9. কৃষি-সংবাদ
  10. খেলা-ধুলা
  11. জাতীয়
  12. জীবনযাত্রা
  13. ধর্ম
  14. প্রবাস প্রযুক্তি
  15. ফিচার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিভক্ত করা হলো-

নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৩, ২০২৫ ১:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এটি একটি বড় কাঠামোগত সংস্কার এবং এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা থেকে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রমকে পৃথক করার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস এবং রাজস্ব আহরণের আওতাকে সম্প্রসারিত করা।

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার সবচেয়ে কম কর-জিডিপি অনুপাতের মধ্যে একটি (বিশ্বব্যাপী এ অনুপাত গড়ে ১৬.৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এ অনুপাত ১১.৬ শতাংশ)। জনগণের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে এ উন্নীত করতে হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এনবিআর পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতি প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার জন্য একটি একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়—এই ধরনের ব্যবস্থা স্বার্থের দ্বন্দ্ব (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) তৈরি করে। এটি ধীরগতিসম্পন্ন ও অদক্ষতা বাড়ায়। বছরের পর বছর ধরে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন যে, বিদ্যমান নীতিমালাগুলো প্রায়শই ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেয়ে রাজস্ব সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান যেসব সমস্যা এনবিআরকে জর্জরিত করে আসছে সেগুলো হলো-

স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট:

রাজস্ব নীতি নির্ধারণ এবং প্রয়োগ উভয়ই একই ছাদের নিচে থাকার ফলে কর নীতির সাথে আপোস এবং ব্যাপক অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর আদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো কাঠামোগত জবাবদিহিতার আওতায় নেই এবং প্রায়শই কর খেলাপিদের কাছ থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে জনস্বার্থের দিক অগ্রাধিকার না দিয়ে আপোস করেন। অনেক ক্ষেত্রে, কর আদায়কারীরা কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে তাদেরকে উল্টো সহায়তা করে থাকেন।

কর আদায়কারীদের কর্মদক্ষতা বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়া নেই এবং তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতি নিরূপণে কোনো পরিমাপযোগ্য কর্মদক্ষতা সূচকও নেই।

ধীর গতির রাজস্ব আদায়:

একইসঙ্গে দুই দায়িত্ব– নীতি প্রণয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, উভয়েরই গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে ট্যাক্স নেট সংকীর্ণই রয়ে গেছে এবং রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

দুর্বল শাসনব্যবস্থা:

এনবিআর বিদ্যমান আইন ও বিধির অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ, দুর্বল বিনিয়োগ সুবিধা এবং পদ্ধতিগত শাসন সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে, যার সবকটিই বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করেছে।

আমলাতান্ত্রিক ওভারল্যাপ:
বিদ্যমান কাঠামো—যেখানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যিনি প্রধান তিনিই এনবিআরের নেতৃত্ব দেন। এটি বিভ্রান্তি এবং অদক্ষতা তৈরি করছে, কার্যকর কর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নকে ব্যাহত করেছে।

পুনর্গঠন যেভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে-

যেসকল দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য এই স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন কাঠামোটি বাস্তবায়ন প্রয়োজন:

দায়িত্বের সুস্পষ্ট বণ্টন:
রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তির ব্যবস্থাপনা করবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ রাজস্ব নীতির প্রয়োগ, নিরীক্ষা এবং যথাযথ বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করবে। কর নির্ধারণকারী কর্তৃপক্ষই কর আদায়কারী হবে না, এই পৃথকীকরণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হবে এবং যেকোনো ধরনের যোগসাজশের সম্ভাবনাকে দূর করবে।

দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন:
এ সংস্কারের ফলে প্রতিটি বিভাগ তার মূল লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ দিতে পারবে, বিশেষায়িত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে।

করের আওতা সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালী প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা:
এই সংস্কার নেট ট্যাক্স সম্প্রসারণ করবে, পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীলতা কমাবে এবং পেশাদার দক্ষ জনবলকে উপযুক্ত কাজে নিযুক্ত করার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর আদায়কে শক্তিশালী করবে বলে।

উন্নত ও উন্নয়নমুখী নীতি প্রণয়ন:
শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের পরিবর্তে এই ডেডিকেটেড পলিসি ইউনিট ভবিষ্যতমুখী কর কৌশল তৈরি করতে পারবে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন:
নির্ভরযোগ্য নীতিমালা এবং একটি পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং এর মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতের অভিযোগ কমে আসবে।

সবশেষে, এই পুনর্গঠন কেবল একটি আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয়, এটি একটি ন্যায্য, উন্নত এবং সক্ষম কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের চাহিদা পূরণ এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব নীতি নির্ধারণ পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী করা এবং স্বচ্ছ কর প্রশাসন গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

In addition to creating news on this site, we collect news from various news sites and publish it with relevant sources. Therefore, if you have any objections or complaints about any news, you are requested to contact the authorities of the relevant news site. It is illegal to use news, photographs, audio and video from this site without permission.