
চীন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে যে, তারা সম্প্রতি স্বাক্ষরিত অস্থায়ী বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘন করছে। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চিপ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, চিপ ডিজাইন সফটওয়্যারের সরবরাহ বন্ধ, এবং চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকি চুক্তির শর্তাবলি পরিপন্থী।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে,
“যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপগুলো জেনেভায় আয়োজিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য আলোচনায় অর্জিত ঐক্যমত্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং চীনের আইনসম্মত অধিকার ও স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে।”
ট্রাম্পের পাল্টা অভিযোগ
এর আগে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, চীন নিজেই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, ১২ মে, দুই দেশ পারস্পরিক উচ্চহারে আরোপিত শুল্ক কিছুটা শিথিল করে ৯০ দিনের জন্য একটি অস্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছেছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই পক্ষের এমন বাকযুদ্ধ ভবিষ্যৎ বাণিজ্য আলোচনার পথ আরও কঠিন করে তুলবে।
Gavekal Research-এর বিশ্লেষক আর্থার ক্রোয়েবার বলেন,
“জেনেভা চুক্তির পর বহু বিষয় অস্পষ্টই রয়ে গেছে। আমরা এখনো জানি না—ট্রাম্প, বাণিজ্য প্রতিনিধি দল, নাকি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ—আসলে কে মার্কিন বাণিজ্যনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।”
তার মতে, এই বাণিজ্য নীতিগুলোতে বাস্তব কৌশলের চেয়ে শক্তি প্রদর্শনের প্রবণতাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউস আশাবাদী
অন্যদিকে, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট রবিবার “ফেস দ্য ন্যাশন” অনুষ্ঠানে জানান,
“আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে প্রত্যক্ষ আলোচনা হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। আমরা খুব শিগগিরই অগ্রগতি দেখতে পারব।”
বাজারে প্রভাব: ওয়াল স্ট্রিটে পতন
এই উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও। সোমবার S&P 500 সূচক ১০ পয়েন্ট বা ০.২% কমে ৫,৯০১-এ দাঁড়ায়। ডাও জোন্স সূচক পড়ে ০.৪% এবং প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক কমেছে ০.১%।
১২ মে’র শুল্ক বিরতি ও চুক্তির মূল শর্ত
১২ মে স্বাক্ষরিত অস্থায়ী চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের চীনা পণ্যে আরোপিত ১৪৫% শুল্ক কমিয়ে ৩০% করে, এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে তাদের শুল্ক ১২৫% থেকে কমিয়ে ১০% এ নামিয়ে আনে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, তারা শুল্ক ছাড়াও নন-ট্যারিফ বিধিনিষেধও স্থগিত রেখেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একতরফাভাবে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপ এই চুক্তিকে কার্যত অকার্যকর করে তুলছে।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তু?
সবচেয়ে বিতর্কিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২,৭৫,০০০-এর বেশি চীনা শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হুঁশিয়ারি
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিবিদরা এই নতুন উত্তেজনাকে মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।
হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্ল ওয়াইনবার্গ বলেন,
“যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আবার পূর্ণমাত্রার বাণিজ্য বিচ্ছেদে যায়, তাহলে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, শিল্প কাঁচামালের চাহিদা কমে যাবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নামবে।”